খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর
খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর

খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর

  • অথবা, খলজি শাসনের ফলাফল লেখ।  
  • অথবা, খলজি শাসনের ফলাফল সম্পর্কে কি জাन?

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে খলজি বংশ এক নবযুগের সূচনা করে। সুলতান কায়কোবাদ হত্যার মাধ্যমে জালালউদ্দিন ফিরোজ শাহ খলজির ক্ষমতা লাভের মাধ্যমে খলজি বংশের উৎপত্তি হয়।

জালালউদ্দিন থেকে নাসিরউদ্দিন খসরু খলজি বংশের শাসনকাল পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি বংশের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করে।

খলজি শাসনের ফলাফল : নিম্নে খলজি শাসনের ফলাফল আলোচনা করা হলো :

১. বৈপ্লবিক পরিবর্তন : খলজি শাসনামলে শাসনের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। বিভিন্ন সংস্কার ও শাসন নীতি সংস্কারে এ বংশের অবদান অনস্বীকার্য যা পরবর্তীতে বিভিন্ন শাসক অনুসরণ করেন। এ কারণে এ বংশের শাসন ভারতবর্ষের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। 

এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক ড. হাবিব বলেছেন, খলজি বংশের ক্ষমতা লাভের ফলে এবং বিভিন্ন সংস্কারের ফলে যে পরিবর্তন হয়ে তাকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সুতরাং খলজি যুগ বৈপ্লবিক শাসনের যুগ ।

২. শোষণ থেকে মুক্তি : খলজি শাসনামলে লোকেরা শোষণ নীতির হাত থেকে মুক্তি পায়। সাধারণ লোকেরা কৃষক ও ভূমিদাসরা সুলতান আলাউদ্দিনের রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে মধ্যস্বত্বভোগী ও জমিদার চৌধুরী, খুৎ, মুকাদ্দাম, এর অত্যাচার থেকে রক্ষা পায়। 

এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ ড. হাবিব বলেন, খলজি শাসনকালে প্রকৃতপক্ষে কৃষি অর্থনীতির বিপ্লব ঘটে ।

৩. নবযুগের সূচনা : খলজি বংশের ক্ষমতা লাভের ফলে ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ড. কে. এস. লাল তার খলজি বংশের ইতিহাস গ্রন্থ খলজি শাসকের গুরুত্বের দিকে বিচার করেছেন। 

তার মতে, খলজিরা কেবল একটি নতুন রাজবংশের পত্তন করেনি। তারা অবিরাম রাজ্যবিস্তার করে নতুন শাসনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক নবযুগের সূচনা করে।

৪. কৌলিন্য ছাড়া সিংহাসন লাভের নীতি : খলজিরা ইলবারি তুর্কি না হয়েও তারা রাজশক্তি অধিকার করেন। ঘুর ও গজনির সঙ্গে তাদের যোগসূত্র ছিল না। 

তারা ভারতীয় মুসলিম হিসেবে পরিচিত ছিল। যোগ্যতা থাকলে বংশ বা জাতি ছাড়াও সুলতানি সিংহাসনে আরোহণ করা যায় এ নীতি তারা প্রতিষ্ঠা করে। 

তাদের এ নীতি ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রশংসিত হয়। মূলত তাদের শাসনকাল ছিল গৌরবের শাসনকাল, বিশেষ করে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির শাসনকাল।

৫. মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা : অবহেলিত ভারতীয় মুসলিমদের নেতারূপে খলজিরা দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ইলবারি তুর্কি শাসকদের শ্রেণি হিসেবে একচেটিয়া অধিকারের প্রথাকে তারা সমর্থন দেন। 

তাদের শাসন আমলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। | ফলে মুসলমানৱা সুযোগ সুবিধা লাভ করে এবং সফলতা লাভ করে।

৬. সামরিক শক্তিনির্ভর শাসনব্যবস্থা : কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, খলজিরা আরো একটি নীতির প্রতিষ্ঠা করেন। | তা হলো সামরিক শক্তির অধিকারী হলে সামরিক শক্তি দ্বারাই রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা যায়।

ড. আর ত্রিপাঠীর মতে, খলজিরা সর্বপ্রথম এ নীতির প্রবর্তন করেন যে, সামরিক শক্তিই হল রাষ্ট্র শক্তির উৎস। 

সুলতান আলাউদ্দিনের অধীনে জনমত না থাকলে তিনি তা অগ্রাহ্য করে সামরিক শক্তির জোরে আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। আলাউদ্দিন এই নীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যান।

৭. রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আগে যে কজন শাসক শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন ছাড়া আর কেউ রাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেননি।

কিন্তু সুলতান আলাউদ্দিন খলজি প্রথম | সিংহাসনকে স্বতন্ত্র মর্যাদা ও অধিকারের উপর স্থাপনের চেষ্টা করেন। এর মাধ্যমে তিনি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে সুলতান আলাউদ্দিনের সময় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

৮. উলেমা শ্রেণির প্রাধান্য : গোপ খলজি শাসন আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার উপর ওলেমা শ্রেণির নিয়ন্ত্রণ বহুল পরিমাণে হ্রাস পায়। 

সুলতান আলাউদ্দিন খলজি উলামা সম্প্রদায় বা খলিফার দোহাই দিয়ে তার সিংহাসনের মর্যাদা বাড়াতে চেষ্টা করেননি। তিনি সব সময় ওলামাদের অগ্রাহ্য করে শাসন পরিচালনা করতেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলজি যুগ ছিল বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যুগ। খলজি শাসনব্যবস্থায় সুলতান আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার তথা মূল্য নিয়ন্ত্রণের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হয়। 

মূলত খলজি যুগ ছিল বিপ্লবের যুগ। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ ড. হাবিব বলেন, খলজি শাসনের বা ক্ষমতা লাভের ফলে এবং সংস্কারের ফলে যে পরিবর্তন ঘটে তাকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের খলজি শাসনের তাৎপর্য আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ