সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর
সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর

সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর

  • অথবা, সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফলসমূহ লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের ইতিহাসে সুলতান আলাউদ্দিন খলজি একমাত্র শাসক যিনি একটি বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি প্রবর্তন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। 

তার অর্থনৈতিক সংস্কারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এ জন্য ঐতিহাসিক লেনপুল তাকে একজন মহান রাজনৈতিক-অর্থনীতিবিদ বলে অভিহিত করেছেন। তার প্রবর্তিত ব্যবস্থা কেবল তার উদ্দেশ্য সাধনেই সহায়তা করেনি, বরং এর ফলে জনসাধারণের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।

সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ফলাফল দুধরনের প্রভাব দেখা যায়। যথা- ইতিবাচক ফলাফল ও নেতিবাচক ফলাফল। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. সামগ্রী সহজলভ্য হয় : মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্ৰী জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল এবং চরম অসুবিধার সময় ও তারা সবকিছু হাতের নাগালে পেত। 

তাদের সব কিছু সহজে লাভ করার ফলে প্রজাগণ সুখী-সমৃদ্ধি জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় এবং সুলতানের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

২. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয় লোকেরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে থাকে। তারা সহজে যেকোনো দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারত। এভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

৩. জনগণ আকৃষ্ট মূল্য : নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যাপারে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান সরকারসমূহ এমনকি ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত সুলতান আলাউদ্দিন খলজির নিকট ঋণী। 

তার এ ব্যবস্থা কেবল তার প্রধান উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করেনি, বরং এর ফলে জনসাধারণের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তাদেরকে তার স্বেচ্ছাচারী অথচ জনকল্যাণকর শাসনের প্রতি ঘনিষ্ঠভাবে আকৃষ্ট করে।

৪. মোগল আক্রমণ প্রতিহত : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আরেকটি ইতিবাচক ফলাফল হলো মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ। 

সুলতান আলাউদ্দিন মোঙ্গলদের প্রতিরোধ করার জন্য সেনাবাহিনী গঠন করেন। আর এ সেনাবাহিনী যাতে স্বল্পমূল্যে তাদের দ্রব্য ক্রয় করতে পারে সেজন্য তিনি মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।

৫. বিদ্রোহের অবসান : সুলতান আলাউদ্দিন খলজির সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও শক্তি বৃদ্ধির ফলে রাজা ও সামন্তদের বিদ্রোহী মনোভাব থেকে নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর এর মাধ্যমে রাজ্যে বিদ্রোহ ও গোলযোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আসে।

৬. সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি : মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাফল্যের জন্যে এ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মূল্য নিয়ন্ত্রণের কারণে খলজির পক্ষে বিরাট বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হয়। 

ড. ঈশ্বরী প্রাসাদ বলেন, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ এবং রাজা ও সামন্ত রাজাদের বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের রাখার মাধ্যমে খলজির গৃহীত সংস্কারের পরিসমাপ্তি ঘটে।

→ নেতিবাচক ফলাফল : নেতিবাচক ফলাফলসমূহ হলো :

১. জনগণের মতের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় : অধ্যাপক শ্রীরাম শর্মা ও সরনের মতে, আলাউদ্দিন খলজির প্রবর্তিত মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি তার মৃত্যুর সাথে সাথে ভেঙ্গে পড়ে। 

তাদের মতে, সুলতানের মৃত্যুর পরেই এই পদ্ধতির পতন ঘটে। এটা জনগণের মতের উপরে নয় বরং ভয়ভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল বলে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

২. কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় : কেবল সেনাবাহিনী ছাড়া এই ব্যবস্থার ফলে জনসাধারণের কোনো উপকার হয়নি। সমগ্র রাজ্যে এর প্রয়োগ হয়নি। 

এ মূল্য নিয়ন্ত্রণ দিল্লি ও এর আশেপাশের এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। কে. এস. লালের মতে, দিল্লির অধিবাসীরা এই ব্যবস্থায় উপকৃত হলেও খাদ্যশস্যের দাম নির্দিষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত : মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সম্পর্কে * কে. এস. লাল বলেন, দিল্লির অধিবাসীরা লাভবান এবং আশেপাশের লোকেরা লাভবান হন। 

তাছাড়া নির্দিষ্ট দামে খাদ্য শষ্যের বিক্রি করার ফলে ব্যবসায়ীরা অনেকটা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে আগ্রহ হারায়।

৪. ইতিহাসবিদদের সমালোচনা : খলিফা জমির চাষিরা সরকারকে ফসলের ভাগ দিয়ে রাজস্ব পরিশোধ করার পর উদ্বৃত্ত ফলে নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলে তাদের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। 

এজন্যে পি. সরণ আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিকে যুক্তিহীন জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা বলে অভিহিত করেন। ড. কে. এস. লাল বলেন, আলাউদ্দিনের মৃত্যুর তার মূল নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ভেঙে পড়ে।

৫. শিল্পের ধ্বংস : অধ্যাপক পি. সরণ আলাউদ্দিনের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলাফল সাধারণভাবে খুব খারাপ ছিল বলে মনে করেন। দিল্লির অভিজাত, কর্মচারী, সেনাদল সস্তায় জিনিসপত্র পেয়ে সুখে থাকলেও কারিগর, শিল্প ও শিল্পদ্রব্যের উৎপাদকরা ধ্বংস হতে থাকে বলে তিনি মনে করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যাপারে ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান সরকারসমূহ, এমনকি ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত সুলতান আলাউদ্দিন খলজির নিকট ঋণী। 

তার প্রবর্তিত ব্যবস্থা কেবল তার প্রধান উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সাধনে সহায়তা করেনি। এর ফলে জনসাধারণের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তাদেরকে তার স্বেচ্ছাচারী অথচ জনকল্যাণ শাসনের প্রতি ঘনিষ্ঠভাবে আকৃষ্ট করেছিল।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের সুলতান আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ফলাফল আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ