ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।

ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর
ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর

ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর

  • অথবা, ইব্রাহিম লোদীর শাসনকালের বর্ণনা দাও ৷
  • অথবা, ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র সম্পর্কে মূল্যায়ন কর।

উত্তর : ভূমিকা : দিল্লি সালতানাতের শেষ সুলতান এবং লোদী বংশের শেষ শাসক ইব্রাহিম লোদী। লোদী বংশের ইতিহাসে সুলতান ইব্রাহিম লোদীর শাসনকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করে প্রথম দিকে লোদী বংশের যোগ্যতম শাসক হিসেবে পরিচয় দিলেও পরবর্তীতে তার অদক্ষতার কারণে আফগান আমির বাবরের নিকট পরাজয়বরণ করার মাধ্যমে লোদী বংশের পতন ঘটে। কিন্তু তারপরেও যতদিন সিংহাসনে ছিলেন ততদিন কৃতিত্বের সাথে শাসন করে গেছেন ।

→ ইব্রাহিম লোদীর পরিচয় : ইব্রাহিম লোদী ছিলেন দিল্লির লোদী বংশের তৃতীয় ও শেষ সুলতান। তিনি ছিলেন লোদী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক সিকান্দার লোদীর সুযোগ্য পুত্র। 

১৫১৭ সালে তার পিতা সিকান্দার লোদী মৃত্যুবরণ করলে ইব্রাহীম শাহ উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসন আরোহণ করেন । তিনি মাত্র. নয় বছর দিল্লির সিংহাসন শাসন করেছেন।

• ইব্রাহিম লোদীর শাসনকাল : নিয়ে ইব্রাহিম লোদীর শাসনকাল সম্পর্কে আলোচনা কর হলো :

১. ষড়যন্ত্র মূলোৎপাটন : ইব্রাহিম লোদী সিংহাসনে আরোহণের পরপরই অভিজাতবর্গের একটি দল সুলতানের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা জালালউদ্দিনকে জৌনপুরের সিংহাসনে বসিয়ে সাম্রাজ্য ভাগাভাগির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়েন। 

ইব্রাহিম ফতেহ খান এবং খান জাহানের সহায়তায় অগ্রসর হয়ে জালালউদ্দিনকে পরাজিত ও হত্যা করেন। অতঃপর তিনি নিজেকে অন্যান্য উদ্যত আফগানদের দমনে আত্মনিয়োগ করেন।

২. জালাল খানকে দমন : আজমই হুমায়ুন শিরওয়ানীর নেতৃত্বে এক বিরাট বাহিনী জালাল খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে জালাল খান গোয়ালিওর হতে পলায়ন করে মালবের শাসনকর্তা দ্বিতীয় মাহমুদের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু ইব্রাহিম লোদী জালাল খানকে পরাজিত ও নিহত করে সুলতানি রাজ্যের ব্যবচ্ছেন রহিত করেন।

৩. আফগান অভিজাতদের দমননীতি : জালালউদ্দিনের অপসারণের পর ইব্রাহিম লোদী উদ্ধত আফগান অভিজাতদের | দমন করার জন্য সচেষ্ট হন। তিনি আফগান ও অন্যান্য অভিজাতবর্গের সম্পূর্ণরূপে প্রভাবহীন ও ক্ষমতাহীন করার জন্য | নীতি গ্রহণ করেন। 

কিন্তু এসব নীতির বিরুদ্ধে অনেক আফগান আমিরগণ তথা অভিজাত শ্রেণি সুলতানের প্রতি বিরূপ হয়ে শত্রু হিসেবে বিরোধিতা করতে লাগলেন।

৪. লাহোরের শাসনকর্তার প্রতি দুর্ব্যবহার : সুলতান ইব্রাহিম লোদী আফগান অভিজাতদের দমন নীতির লক্ষ্যে লাহোর শাসনকর্তা ও লোদীর পুত্র দিলওয়ার খানের প্রতি | সুলতান ইব্রাহিম লোদী দুর্ব্যবহার করে আফগান অভিজাতদের অসুস্রষ্টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় ।

৫. আফগানদের বিদ্রোহ : আফগান অধিপতিদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ করে নিলে ইব্রাহিম লোদীর রূঢ় কার্যব্যবস্থার ফলে | তিনি ক্রমেই আফগান অভিজাতবর্গের সহানুভূতি ও সহায়তাই হারালেন। 

তারা বিদ্রোহী হয়ে তার প্রাধান্য ও আনুগত্য অস্বীকার করেন। ইব্রাহিম লোদীর উদ্ধত ব্যবহার, কঠোর রীতিনীতি আফগান অভিজাতদের বিরক্ত করে তোলে। ফলে সমগ্র আফগানদের মাঝে বিদ্রোহী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ে।

৬. বিহার স্বাধীনতা ঘোষণা : আফগান অধিপতিদের মাঝে বিদ্রোহী মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিহারের শাসনকর্তা সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে অস্বীকার করে সারিনা খান লোহানী বিহারের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। 

এর ফলে ইব্রাহিম লোদীর বিরুদ্ধে বাস্তবিক বিদ্রোহ রূপ দেয়, যা সুলতানের জন্যে ভবিষ্যৎ পতনের জন্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে সুলতান ইব্রাহিম লোদীর ব্যর্থতা প্রকাশ পায়।

৭. বাবরকে ভারত আক্রমণের আহ্বান : সুলতানদের ভুল |নীতি আফগান অধিপতিদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ, দৌলত খানের সাথে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য, সুলতানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য, দৌলত খান লোদী ও আলম খান ইব্রাহিমকে সিংহাসনচুত্য করার জন্য আফগান অধিপতি আমির বাবরকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানান ।

৮. বাবরের অভিযানের প্রস্তুতি : বাবরকে ভারত আক্রমণের আহ্বান জানালে অপর দিকে মেবারের রানা সিংও বাবরকে | সহযোগিতার কথা বলে ভারত আক্রমণের জন্য উৎসাহিত করলেন। 

বাবর ১৫২৪ সালে সসৈন্য নিয়ে ঝিলাম ও চেনাব নদী অতিক্রম করে পুনরায় পাঞ্জাবে উপস্থিত হয়ে লাহোর অধিকার করে দীপালপুর দুষ্ঠন করে। তবে দৌলত খান বাবরের কাছ থেকে পাঞ্জাবের শাসন ক্ষমতা চেয়েছিলেন। বাবর তাতে সাড়া দেয়নি।

৯. ভারতের অন্তঃসারশূন্য : আফগান অধিপতিদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ, দৌলত খানের প্রতি দুর্ব্যাবহার ইত্যাদি যার ফলে বাবরকে ভারত আক্রমণ ইত্যাদির প্রতি ইব্রাহিম গোনীর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় সাম্রাজ্যে যে অন্তঃসারশূন্য দেখা দেয় তার সুযোগ বাবর পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীর মুখোমুখি হন।

১০. পানিপথের যুদ্ধ : সুলতান ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতা প্রকাশকালে অবশেষে আফগান আমির বাবর সুলতানের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। 

১৫২৫ সালে ১৭ নভেম্বর ভারতবর্ষে প্রায় বারো হাজার সৈন্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। বাদাখশান থেকে হুমায়ুনও শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে পিতার সাথে যোগ দেয়। 

বাবর শক্তি সঞ্চয় করে প্রথম পাঞ্জাব আক্রমণ করেন। পাঞ্জাব থেকে উজবেকদের বিতাড়িত করে প্রাথমিক সমস্যা মোকাবিলা করেন। 

অপরদিকে সুলতান ইব্রাহিম লোদী সৈন্য সংগ্রহ করতে থাকে। সুলতান ইব্রাহিমের সৈন্য সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ও এক হাজার হস্তী। ১৫২৬ সালে ২১ শে এপ্রিল বিখ্যাত যমুনা নদীর তীরবর্তী, পানিপথের প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। 

বাবর পূর্বেই আক্রমণ করে সুলতানকে দুর্বল করে ফেলে। যুদ্ধ আরম্ভ হয় দু'পক্ষের মাঝে সকাল সাড়ে নয়টায়। এ যুদ্ধে প্রথম বাবর কামান ও বন্দুক ব্যবহার করেন। 

সুলতান ইব্রাহিমের বিশাল বাহিনী থাকা সত্ত্বেও বাবরের প্রশিক্ষিত গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে সুলতান পরাজিত হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সুলতান ইব্রাহিম লোদী মৃত্যুবরণ করলে লোদী বংশের পতন ঘটে ।

১১. ন্যায়পরায়ণ শাসক : সুলতান যদিও সবিশেষে ব্যর্থতার পরিচয় দেয় অনেক উন্নতিলাভ করে ঐতিহাসিক ফিরিশতার মতে, ইব্রাহিম লোদী কোনো বংশ বা ব্যক্তিবিশেষের সুযোগ সুবিধা প্রদান করেননি। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সকলকে সমান চোখে দেখতেন, তার দরবার ছিল অনেক জমকালো ।

১২. ইব্রাহিম লোদীর চরিত্র : সুলতান ইব্রাহিম লোদী মানুষ হিসেবে উদার ও দয়ালু হলেও শাসক হিসেবে তার অনেক দোষ ছিল। ঐতিহাসিক ভিত্তি মহাজন বলেন সুলতান ইব্রাহিম লোদী ছিলেন বুদ্ধিমান, নির্ভীক সাহসী, ধার্মিক ও বদান্যতার জন্য তার কিছুটা সুনাম ছিল। 

বাস্তবিকভাবে সাহসী থাকার কারণে পানিপথের যুদ্ধে নিজেই সাহসের সাথে মোকাবিলা করে মৃত্যুমুখে পতিত হন। তবুও যুদ্ধের ময়দান হতে পিছপা হননি ।

১৩. লোদী বংশের পতন : সুলতান ইব্রাহিম লোদীর পানিপথের যুদ্ধে পতনের মধ্য দিয়ে দিল্লির লোদী বংশের পতন ঘটে। মুঘল বংশ শাসন শুরু করে। 

এই প্রথম কোন শাসক যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেন। সুলতান ইব্রাহিম লোদীর দুর্বলতার কারণে বাবর দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করতে সক্ষম হলেন।

উপসংহার : উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় ইব্রাহিম লোনী প্রথম অবস্থায় চমৎকারভাবে রাজ্য শাসন শুরু করলেও পরবর্তীকালে ব্যর্থ হন। নিজের ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে দাঁড়ায়। 

মানুষ হিসেবে ভাল থাকলেও শাসক হিসেবেও তেমন যোগ্যতার পরিচয় দিতে না পারায় লোদী বংশের তথা দিল্লি সালতানাত ধ্বংস হয়। ঐতিহাসিক ভিত্তি মহাজন বলেন, " He started will but failed afterward. He was no match for Badar and no wonder, he lost the game Ret. Muslim Rule in India.

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের ইব্রাহিম লোদীর কৃতিত্ব ও চরিত্র আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ