নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ |
নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ
- অথবা, সুলতানি শাসন আমলে নিরি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর।
- অথবা, নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : তুর্কি-আফগান শাসনাধীন ভারতে মুসলিম রাষ্ট্র ধর্মাশ্রয়ী বিধাতাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল কিনা এই নিয়ে ঐতিহাসিকগণ একমত পোষণ করেন না।
এ বিষয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতানৈক্য থাকলেও দিল্লি সালতানাতের রাজনৈতিক ক্ষমতা, অর্থনৈতিক ক্ষমতা ইসলামের শরিয়তের আদলে গড়ে উঠেছিল।
জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসনক্ষমতাকে বিভিন্ন স্তরে বিভাজন করেন। তাদের এই প্রাদেশিক শাসনই সাম্রাজ্যের কল্যাণ শান্তিশৃঙ্খলা আনয়নে কাজ করছে।
সুলতানি আমলে দিল্লির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা : সুলতানি শাসনব্যবস্থা ছিল দুই ধরনের । যথ-
১. কেন্দ্রীয় ও
২. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা।
নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সুলতান সকল ক্ষমতার অধিকারী : সুলতানি শাসনমালে সুলতানই ছিলেন সকল ক্ষমতার অধিকারী। কেননা দিল্লির সুলতানগণ স্বাধীন সুলতান ছিলেন।
অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বিরোধিতা ও বহিরাগত দুর্ধর্ষ মুঘলদের উপর্যুপরি আক্রমণের ফলে দিল্লি সুলতানি শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি সামরিক হওয়া অতি স্বাভাবিক ছিল।
তাই সুলতান একাধারে ছিলেন সর্বোচ্চ শাসনকর্তা। প্রধান সেনাপতি, প্রধান বিচারক ও আইন প্রণেতা অর্থাৎ রাজা যা বলত তাই আইন বলে গণ্য হবে।
সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে রাজা বা সুলতান। সর্বক্ষেত্রে তার আইনও বলবৎ থাকতে সুলতানি আমলে আমা শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
২. শরিয়ত বিধির প্রাধান্য : শাসনব্যবস্থায় সুলতান ছিলেন সর্বময়কর্তা। সকল কিছুর উপর সুলতানের সম্পূর্ণ কর্তৃত্বাধীন ছিল। সুলতানি শাসকগণ শাসনব্যবস্থার সকল কার্য সম্পাদন করার জন্য শরিয়তের বিধান অনুসরণ করতেন।
স্বীয় রাজ্যের শান্তি নিরাপত্তার রক্ষার দায়িত্ব সুলতানের ছিল। সুলতানি শাসকগণ অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব দেখা দেয় সুলতানি শাসন আমলে। তাই বেশিরভাগ শাসকই ইসলামি শরিয়তের অনুসরণ করে সম্রাজ্যের শাসন ক্ষমতা অধিষ্ঠিত থাকবে এটাই ছিল স্বাভাবিক।
৩. উজির : সুলতানকে শাসনকার্যে সহায়তার জন্য সুলতানি আমলে উজির এবং মন্ত্রী ছিলেন। ঐতিহাসিক আফিফের বর্ণনা থেকে জানা যায়, তৎকালীন রাজদরবারে উজিরদের অনেক প্রভাব ছিল।
উজিরকে প্রধানমন্ত্রীর তথা রাজ্য ও রাজকোষের দায়িত্বে থাকত। সুলতান কোনো বিশেষ নীতি গ্রহণ প্রাক্কালে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ত উজিরের। মাঝে মাঝে সুলতানের বিকল্প বলা ইতো।
তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন কাজ তদারকি করতেন। বৈদেশিক কোনো নীতি গ্রহণ করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাব থাকত, উজিরের।
সে আমলে উজির পদটি অনেক সম্মানজনক পদ ধরা হয়। সুলতান এর জন্য উজিরকে মোটা অংকের বেতন ভাতাও দিত। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় অনেক গুরুত্ব ছিল।
৪. বিচার বিভাগ : প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় আরেকটি অন্যতম হচ্ছে বিচার বিভাগ। সুলতান শাসনমালে বিচারব্যবস্থা অনেক সচ্ছল ছিল। সে আমলে রাজ্য শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনে ততটাই বেশি শান্তি স্থাপনের হাতিয়ার বিচার বিভাগের প্রধান ছিল সুলতান নিজে।
এছাড়াও বিচার বিভাগ পরিচালনা করার জন্য কাজি নিয়োগ করা হতো। প্রত্যেক প্রাদেশিক বিচারালয়ে সুলতান সৎ ও যোগ্য কাজি নিয়োগ করতেন। ধর্মীয় ও দাতব্য বিষয়ক প্রশাসনের দায়িত্বভার ছিল দিওয়ান-ই-কাজি।
৫. সামরিক বিভাগ : সুলতানি আমলে প্রশাসনব্যবস্থায় সামরিক বিভাগকে দিওয়ান-ই-আরজ বলা হতো। সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন সিপাহশালার নৌ সামরিক বাহিনীর তদারকের জন্য আমির ই বহর এবং সেনাবাহিনীর বেতনের জন্য বকশি-ই-ফৌজ ইত্যাদি ছিল সামাজিক বিভাগের অন্যতম স্তর।
সামরিক বিভাগ সৈন্যদের বেতন ভাতা, তাদের প্রশিক্ষণ তদের পরিচালনার জন্য প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা সামরিক বিভাগ গড়ে উঠে। অশ্বারোহী পদাতিক সেনাবাহিনী ইত্যাদি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত সামরিক বিভাগ।
৬. পুলিশ বিভাগ : দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল কোতোয়ালের উপর। কোতোয়ালকে আবার পুলিশ বিভাগও বলা হয়।
অন্য একজন রাজকর্মচারী মুহতাসিব জনসাধারণের আচার ব্যবহারের উপর নজর রাখতেন এবং ওজন, পরিমাণ প্রভৃতি ঠিক দেওয়া হয়েছে কিনা তিনি বাজার পরিদর্শন করে ইহার প্রতি কড়া নজর রাখতেন।
কোতোয়ালের দায়িত্ব ছিল শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শহরে আগন্তুকদের গতিবিধির দিকে লক্ষ্য রাখতো।
৭. গোয়েন্দা বিভাগ : সুলতানি শাসন আমলে দিল্লির শাসকগণ বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের বিভিন্ন অংশ হতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য বহুসংখ্যক গুপ্তচর নিয়োগ দেওয়া হতো।
দিওয়ান-ই-কোতোয়ালির ফৌজদারি মোকাদ্দমার বিচার আদালতের যোগাযোগ ছিল। এখানে ফৌজদারি মোকাদ্দমার বিচার করা হয়। বঙ্গ সাহিত্য থেকে জানা যায় গোয়েন্দা বা গোপন সংস্থা কার্যরত ব্যক্তিদের জাসু বা দানী নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
৮. দিওয়ান-ই-ওয়াজীরাত : সুলতানি শাসনামলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার আরেকটি বিভাগ হচ্ছে দিওয়ান-ই-ওয়াজীরাত তথা রাজস্ব বিভাগ। এ বিভাগ সম্রাজ্যের রাজস্বের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করত।
কৃষি ক্ষেত্রে করা, জমির খারাজ, গোচারণ কর, পানিকর প্রভৃতি নানা প্রকার কর জনসাধারণের কাছ থেকে আদায় করা হতো। এ সকল রাজস্ব কর সরকারি আয়ের অন্যতম উৎস ছিল।
দিওয়ান-ই- ওয়াজীরাতের মাধ্যমে এসব রাজস্ব বিভাগে কর্মচারীর নিয়োগ হিসাব নিকাশ ইত্যাদি কাজের জন্য এ বিভাগ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৯. সরবারের আনুষ্ঠানিকতা : রাজদরবারের আনুষ্ঠানিকতা পালন করার জন্য বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হতো। রাজপ্রাসাদের কার্যকলাপ পরিদর্শন করার জন্য ওয়াকিল দার নিয়োগ করা হতো।
রাজকীয় অনুষ্ঠান তদারকির জন্য বরবাক রাজস্তপুরের পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আমির-ই-মজলিস রাজকীয় শিকার যাত্রার বন্দোবস্ত করার জন্য আমির-ই-শিকার প্রমুখ রাজকর্মচারী নানা কাজের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকত।
বারবার রাজদরবারের আচারবিধি ও নিয়মকানুন প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন এবং রাজদরবারে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সাথে বিদেশি যুবরাজ অথবা রাষ্ট্রদূতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন।
১০. ইকতা : সুলতানি শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য প্রশাসন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেন। তার মাঝে ইকতা আরেকটি অন্যতম বিভাগ। এটি ছিল বিজিত অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা ব্রক্ষার দায়িত্ব।
ইকতাদার তার এলাকার রাজস্ব আদায় করতেন এবং শাসনকার্য ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় দরবারে প্রেরণ করতেন। স্বীয় এলাকা স্বাধীনভাবে পরিচালনার ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
১১. কাজি : কাজি-উল-কুজ্জাত বা প্রধান বিচারপতি ছিলেন। বিচার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত। মুফতিগণ প্রধান বিচারপতিকে পরিত্র কোরআনের আইন বিশ্লেষণে সাহায্য করিতেন।
আমিরে দান নামক কর্মচারীর কর্তব্য ছিল অপরাধীকে কাজির নিকটে বিচারের জন্য উপস্থিত করা। ইসলামের ধর্মনীতি কার্যকর করার জন্য সাদর-ই- সূদুর ছিলেন।
দণ্ডবিধি ছিল অত্যন্ত কঠোর শাসনব্যবস্থায় সত্য ও ন্যায় ধর্ম অবলম্বন করে দিল্লির সুলতান এবং অন্যান্য বিচার বিভাগের রাজকর্মচারীরা বিচার কার্য পরিচালনা করতেন।
এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে বিনা বাধায় পরিচালনা করতে কাজিগণ কার্যনির্বাহ সংক্রান্ত ক্ষমতাসম্পন্ন শাসনকার্য পরিচালকের অধীনতা হতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিলেন।
১২. দিওয়ান-ই-খয়রাত দিওয়ান-ই-ইশতিকাক : সুলতানি আমলে প্রশাসন ব্যবস্থার আরেকটি অন্যতম বিভাগ ছিল দিওয়ান- ই-খায়রাৎ অর্থাৎ সরকারি সাহায্যে বিতরণের বিভাগ।
এ বিভাগ সরকারি সাহায্য বিতরণের তদারকি করত। রাজ্যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সেখানে সরকারি সাহায্য পাঠানো, বিতরণ ইত্যাদি কারো নিয়োজিত থাকত।
ফলে এ বিভাগের মাধ্যমে সুলতান সাম্রাজ্যের জরুরি সমস্যা সমাধানে অনেক সহায়তা করে থাকত। প্রশাসনের আরেকটি বিভাগ ছিল দিওয়ান-ই-ইশতিকাক অর্থাৎ সরকারি ভাঙা বিভাগ।
এ বিভাগের দায়িত্ব ছিল প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীদের ভাতা প্রদান করা। কোনো কর্মচারী কি পরিমাণ ভাতা পাবে, কি কি সুবিধা পাবে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজটি নির্ণয় করার দায়িত্ব ছিল দিওয়ান-ই-ইশতিকাক বিভাগের।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুলতানি শাসন আমলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠার মাধ্যমে সাম্রাজ্যে তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠার মাধ্যমে সাম্রাজ্যে তাদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভারতীয় সাম্রাজ্য শাসন করে গিয়েছেন।
এসব প্রশাসনিক বিভাগের মাধ্যমে যে শাসনকার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা হতো তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। সে আমলে যে সুষ্ঠু ও জনকল্যাণকামী প্রশাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার অন্যতম উদাহরণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সুলতান শাসন ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ। যদি তোমাদের আজকের নিন্ধির কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে যা জান লিখ পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।