লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর। আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।
লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর |
লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর।
- অথবা, লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান | সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
- অথবা, তুমি কাকে লোদী বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলে মনে কর? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও ৷
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতান বাহলুল লোদীর প্রতিষ্ঠিত লোদী বংশের শাসন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। সুলতান বাহলুল লোদী, শুধুমাত্র লোদী বংশ প্রতিষ্ঠা করে যান কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপন করে যেতে পারেননি।
সুলতান বাহলুল লোদীর মৃত্যুর পর তার পুত্র সুলতান সিকান্দার লোদী স্বীয় দক্ষতার মাধ্যমে লোদী বংশ নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। সুলতান সিকান্দার লোদী তার শাসনব্যবস্থার দক্ষতার কারণে লোদী বংশের সর্বাপেক্ষা কীর্তিমান শাসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
সিকান্দার লোদীর পরিচয় : সিকান্দার লোদী লোদী বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান বাহলুল লোদীর সুযোগ্য পুত্র। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিকান্দার লোদীর পূর্বনাম ছিল নিজাম খান।
সুলতান হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণ করে সিকান্দার শাহ উপাধি ধারণ করে দিল্লি সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করেন।
সুলতান সিকান্দার লোদী ১৪৮৮ সালে হতে ১৫১৭ সালে পর্যন্ত প্রায় ২৯ বছর ভারতীয় উপমহাদেশে দিল্পিকেন্দ্রিক লোদী শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন।
বাহলুল লোদীর মৃত্যুর পর কে সুলতান হবে তা নিয়ে আমিরদের মাঝে বাদানুবাদ ঘটে। অবশেষে সিকান্দার লোদীকে শাসক হিসেবে মনোনীত করেন আমিরগণ ।
সুলতান সিকান্দার লোদীর শাসনকাল ও কৃতিত্ব : নিয়ে সুলতান সিকান্দার লোদীর শাসনকাল ও কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :
১. বিদ্রোহ দমন : সিকান্দার লোদী শাসন ক্ষমতায় আরোহণের বরবক শাহপস্থিদের মাঝে বিদ্রোহ ঘটে। বরবকৃপন্থি আমিররা সিকান্দার লোদীকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে চায়নি।
তারা চেয়েছিল তারই ভ্রাতা জৌনপুরের গভর্নর বরবক শাহকে লোদী, বংশের পরবর্তী শাসক হিসেবে মনোনীত করতে। অবশেষে বরবক্ শাহ মনোনীত না হওয়ায় তারা বিদ্রোহ করলে সুলতান সিকান্দার লোদী অত্যন্ত নিপুণতার সহিত সেসব বিদ্রোহ দমন করেন।
২. ভ্রাতার বিরুদ্ধে অভিযান : পিতার মৃত্যুর পর বারবক্ শাহ জৌনপুরে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সিকান্দার লোদী স্বীয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এই উদ্দেশ্যে প্রথমে তার ভ্রাতা বরবক শাহের বিরুদ্ধাচরণ করেন।
সিকান্দার লোদী ভ্রাতার বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণের জন্য সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। সেই কঠোর অভিযানে সিকান্দার লোদী বরবক শাহকে পরাজিত করে তাকে বন্দি করেন এবং জৌনপুরের শাসনভার অন্যান্য আফগান আমিরদের হাতে সমর্পণ করেন। ফলে জৌনপুর সুলতান সিকান্দার লোদীর করতোলগত হয়।
৩. শর্কি সুলতানের বিরুদ্ধে অভিযান : জৌনপুর সুলতানের করতেলগত হলে জৌনপুরের জমিদার এবং অন্যান্য নেতৃস্থানীয় লোকেরা পলায়নরত শর্কি সুলতান হোসেন শাহকে স্বীয় রাজ্য জৌনপুর পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করার জন্য আহ্বান জানান।
হোসেন শাহ অনেক সৈন্য সংগ্রহ করে জৌনপুরের দিকে অগ্রসর হন কিন্তু বারনসি পৌছিলে সিকান্দার লোদী বিশাল বাহিনী নিয়ে হোসেন শাহ বাহিনীকে বাধা প্রদান করে দিল্লির নিকটবর্তী স্থানে।
যুদ্ধে হোসেন শাহ শার্ক পরাজিত হলে হোসেন শাহের সৈন্যরা পলায়ন করতে বাধ্য হয়। সুলতান হোসেন শাহ পালিয়ে বাংলাদেশে গমন করেন।
সেখানে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কাছে অশ্রয় গ্রহণ করেন। তার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীন জৌনপুর রাজ্যে সিকান্দার লোদী নিজ কর্তৃত্ব স্থাপন করে।
৪. ত্রিহুত ও বিহার বিজয় : সুলতান সিকান্দার লোদী জৌনপুরের লোদী শাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ত্রিহুত ও বিহারের দিকে নজর দেন। ত্রিহুত ও বিহারে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করার লক্ষ্যে শক্তিশালী অভিযান প্রেরণ করেন।
সুলতান নিজেই সেনা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে অভিযান প্রেরণ করেন। সুলতান সিকান্দর লোদীর আক্রমণে ভীত হয়ে ত্রিহুত ও বিহার বিজয় লাভ করতে সুলতানের বেশি কষ্ট পেতে হয়নি। খুব সহজেই ত্রিহুত ও বিহার বিজয়ের মাধ্যমে সেখানে লোদী বংশের আধিপত্য বিস্তার লাভ করেন ।
৫. বাংলার সুলতানের সাথে সন্ধি : ত্রিহুত ও বিহার বিজয়ের পর সুলতান সিকান্দর লোদী বাংলার সুলতান হুসেন শাহের সাম্রাজ্য অভিযান করার জন্য মনস্থির করেন। তাই বাংলায় আক্রমণের জন্য সুলতান সিকান্দার লোদী বিশাল বাহিনী নিয়ে রওনা হন।
বাংলা আক্রমণ করার সময় সুলতানের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কেননা দিল্লি হতে বাংলার দূরত্ব অনেক ভাই এ আক্রমণ করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। অবশেষে বাংলার সুলতান হুসেন শাহের সাথে সন্ধি স্থাপন করে সুলতান দিল্লি প্রত্যাবর্তন করে।
৬. আফগান দলপতিদের মনোনিবেশ : সুলতান সিকান্দার লোদী জৌনপুরে আধিপত্য বিস্তার করে আফগান দলপতিদের উপর বিশেষ নজর দেন। আফগান দলপত্তিগণ বড় বড় জায়গীর পাইতেন এবং সালতানাতে অত্যন্ত ক্ষমতাবান ছিলেন।
সুলতান বাহলুল লোদী যে মনোভাব প্রদান করতেন কিন্তু সুলতান সিকান্দার লোদী অন্য মনোভাব পোষণ করতেন।
তিনি আফগান আমিরদের ক্ষমতা গর্ব করায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেন। এ উদ্দেশ্য আফগান জায়গীর হিসাব পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়া দেখিলেন যে অনেক গরমিল আছে। তাই অনেকের জায়গীর বাতিল করেন।
৭. আমিরদের ষড়যন্ত্র দমন : আফগান আমিরদের জায়গীর বাতিল করায় সুলতানের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। প্রাথমিকভাবে সুলতান ফতেহ খানকে তাদের দলে ভিড়াতে চেষ্টা করলেন।
ফতেহ খান প্রথমে উৎসাহ দেখালে পরবর্তীতে নিজেই সেই ষড়যন্ত্রের কথা সুলতানের কাছে খুলে বললেন। ফলে সুলতান তাদেরকে দমন করলেন কঠোর হাতে এবং যড়যন্ত্রকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
৮. দোয়াৰে শান্তি প্রতিষ্ঠা : স্বীয় অভিজ্ঞতার দ্বারা সুলতান সিকান্দার লোদী বুঝতে পারলেন দোয়াবে শান্তি রক্ষা পা সুলতানের অন্যতম কর্তব্য। কারণ লোদী সালতানাতের শস্যভাণ্ডার প্রাণকেন্দ্র বলা হয় দোয়াবকে।
তাই সুলতান এভাওয়া, বায়না, কোল, গোয়ালিওর এবং ধলপুরের ভারতীয়দের উপর বিশেষ নজর রেখে আমায় একটি সেনা সদর দফতর ঘাঁটি স্থাপন করে ১৫০৪ সালে। আগ্রা শহরকে মনোরম শহরে পরিণত করে এসব অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে সুলতান নিজেও আগায় স্থানান্তরিত হন।
৯. রাজপুত্রগণকে দমন : দোয়াবে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর সুলতান সিকান্দার শাহ রাজপুতদিগকে দমন করার জন্য অস্থির করেন। সে সময় কোনো কোনো প্রাদেশিক গভর্নররাও স্বাধীনতা ঘোষণার চেষ্টায় ছিলেন।
সুলতান তাদেরকে দমন করেন। তিনি ফোল্পুর, গোয়ালিওর, মারোয়ার বিদ্রোহ দমন করেন। ফ এসব এলাকার সুলতান, রাজপুতগণ সুলতান সিকান্দার লোদীর বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য হন।
১০. রণথঙ্কার ও গোয়ালিয়র অভিযান : সিকান্দার শাহ রাজপুতদের বশ্যতা স্বীকার করার পর তাদের সুলতান শাসনক্ষমতা ফিরিয়ে দেন। এরপর সুলতান রণথম্ভর অভিযান প্রেরণ করে রণথন্ডর বিজয় করেন।
সেসময় গোয়ালিওর রাজা আবার বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সুলতান তাদের বিরুদ্ধে যাত্রা করার জন্য সৈন্যবাহিনী গঠন করেন।
গোয়ালিওর আক্রমণের প্রস্তুতি চলাকালেই সুলতান অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৫১৭ সালে | মৃত্যুমুখে পতিত হলে তার পুত্র ইব্রাহিম লোদী সিংহাসনে আরোহণ করেন।
১১. সর্বাপেক্ষা যোগ্য নরপতি : সুলতান সিকান্দার লোদী বংশের সর্বাপেক্ষা যোগ্য নরপতি ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম আফগান সর্দারদের ক্ষমতা খর্ব করে তাদেরকে বশে আনার চেষ্টা করেন এবং এই কাজে সফলতাও লাভ করেন।
সুলতান সিকান্দার লোদী পিতার প্রতিষ্ঠিত লোদী সাম্রাজ্যকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে যান।
১২. সাম্রাজ্যের সর্বত্র নিরাপত্তা : সুলতান সিকান্দার লোদীর শাসন আমলে সাম্রাজ্যের সর্বত্র নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকত না, তার সময়ে পথচারীরা ও মুসাফিররা নির্ভয়ে পথ চলাচল করতে পারত।
যে সমস্ত জমিদার রায়তদের উপর অত্যাচার করত সুলতান তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতেন। শস্য চলাচলের উপর কর বন্ধ করে দেন।
কৃষকদের উন্নতির জন্য সব সময় চেষ্টা করতেন। সুলতান প্রত্যেকদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারদরের খবরাদি রাখতেন। এসময় সাম্রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করত।
১৩. ন্যায়বিচারক সুলতান : সুলতান সিকান্দার লোদী ন্যায়বিচারক শাসক ছিলেন। তিনি দরিদ্রদের অভিযোগটি নিজে শুনতেন এবং এসব অভিযোগ প্রতিকারের চেষ্টা করতেন।ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কখনো পিছপা হতেন না।
সাম্রাজের শান্তিশৃঙ্খলা, বাজারের আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে চলতে সকল প্রকার দুর্নীতি ও ঠকামি কঠোর হস্তে মোকাবিলা করতেন। সুলতান ব্যক্তিগতভাবে একজন বিজ্ঞ দয়ালু শাসক ছিলেন ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিঃসন্দেহে লোদী বংশের শাসনের সর্বাপেক্ষা যোগ্য সুলতান হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়।
সুলতান সিকান্দার যতদিন জীবিত ছিলেন। অত্যন্ত কঠোরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে যান এবং সাম্রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করেন।
আফগান দলীয় সর্দাররা সব সময় একগুয়েমি পরিচয় দিত কিন্তু সুলতান সিকান্দার লোদী এসব আফগান সর্দারদিগকে আইনশৃঙ্খলা মানতে বাধ্য করত । সর্বোপরি সিকান্দার লোদী ছিলেন বংশের শ্রেষ্ঠতম শাসক ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের লোদী বংশের শাসক হিসেবে সুলতান সিকান্দার লোদীর কৃতিত্ব আলোচনা কর পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো।