মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা করো

মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা করো
মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা করো

মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে আলোচনা করো

  • অথবা, মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত আলোচনা কর। 
  • অথবা, মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের সুচনা হয় কিভাবে? আলোচনা কর।
  • অথবা, মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতবর্ষের শাসন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে মুঘল ও আফগানদের দ্বন্দ্ব। ভারতবর্ষ দীর্ঘদিন ধরে আফগানরা শাসন করে আসছিল। 

সম্রাট বাবর পানিপথের প্রথম যুদ্ধে আফগান শাসক ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। 

ভারতবর্ষে মুঘল- আফগান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত অনেকটা সেখান থেকেই। পরবর্তীতে হুমায়ূনের সময়ে এ দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে।

→ মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত : মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হুমায়ূনের সময়ে মুঘল ও আফগানদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়

নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. মাহমুদ লোদীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা : পানিগথের যুদ্ধে পরাজিত দিল্লির প্রাক্তন সুলতান ইব্রাহীম লোদীর ভাই মাহমুদ লোদী ১৫৩১ খ্রিষ্টাব্দে আফগানদের সংঘবদ্ধ করে জৌনপুরের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং জৌনপুরের মুঘল শাসক জুনাইদ বারলাসকে বিতাড়িত করেন। হুমায়ূন এতে মাহমুদ লোদীর উপর ক্ষিপ্ত হন এবং মাহমুদ লোদীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন।

২. হুমায়ূন কর্তৃক আফগান পরাজিতকরণ : হুমায়ূনের অভিযানের সময় আফগান বাহিনীর মধ্যে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

১৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে আফগান বাহিনীর এ বিশৃঙ্খলাকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন অতর্কিতভাবে আফগান বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। লক্ষ্ণৌর সন্নিকটে দাদরাহের যুদ্ধে আফগান সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

৩. শেরখানের পলায়ন : হুমায়ূনের সাথে যুদ্ধে ছত্রভঙ্গ একটি দল কৌশলী আফগান যোদ্ধা শেরখানের নেতৃত্বে পলায়ন করেন। শেরখান সদলবলে বারানসীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গঙ্গার তীরে অবস্থিত চুনার দুর্গে অবস্থান করেন।

৪. হুমায়ূনের চুনার দুর্গ অবরোধ : হুমায়ূন শেরখানের পলায়নের খবর শুনে শেরখানকে শায়েস্তা করতে চুনার দুর্গের দিকে ধাবিত হন। 

এসময় শেরখান দুর্গের ভিতরে অবস্থান নেন এবং হুমায়ূন চুনার দুর্গকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেন। দীর্ঘ ছয় মাস হুমায়ূন চুনার দুর্গ অবরোধ করে রাখেন।

৫. শেরখানের মৌখিক বশ্যতা স্বীকার : হুমায়ূন চুনার দুর্গ পুরোপুরি অবরোধ করে ফেললে শেরখান হুমায়ূনের প্রতি মৌখিক বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। হুমায়ূন এরই মধ্যে বাহাদুর শাহের আগ্রা অভিযানের সংবাদ পেয়ে দ্রুত আগ্রায় ফিরে যান। 

তবে তার আগে তিনি শেরখানের মৌখিক বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে তার উপর বিহার ও চুনার দুর্গের কর্তৃত্ব অর্পণ করে যান। যা পরবর্তীতে হুমায়ূনের সর্বনাশ ডেকে আনে।

৬. চৌসার যুদ্ধ : মধ্যযুগের ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে চৌসার যুদ্ধ অন্যতম। হুমায়ূন যখন গৌড়ে আরাম-আয়েশ করে দিন কাটাচ্ছিলেন সে সুযোগে শেরশাহ সমগ্র বিহার, জৌনপুর ও কনৌজ অধিকার করে নেয়। 

শেরশাহ হুমায়ূনের আগ্রা ফিরে যাবার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এদিকে হুমায়ূন নিজের বিপদ বুঝতে পেরে গৌড়ে অযথা সময় নষ্ট না করে দ্রুত আগ্রায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। 

হুমায়ূন সদলবলে আগ্রায় যাবার জন্য রওয়ানা হলে বিহারের বক্সারের কাছে গঙ্গাতীরে চৌসা নামক স্থানে শেরশাহ তাকে বাধা প্রদান করে। 

এসময় শেরশাহ হুমায়ূনকে আক্রমণ করলে ১৫৩৯ সালের ২৬ জুন চৌসায় উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে হুমায়ূন সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয় এবং কোনক্রমে জীবন নিয়ে আগ্রায় ফিরে যান।

৭. বিলগ্রামের যুদ্ধ : চৌসার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আগ্রায় ফিরে এসে হুমায়ূন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তিনি পুনরায় নতুন উদ্যমে সৈন্য সংগ্রহ শুরু করেন। 

এ সময় হুমায়ূন ভাইদেরও সহায়তা চান। কিন্তু এতে তিনি ব্যর্থ হন। তা সত্ত্বেও হুমায়ূন ১৫৪০ সালে গোলন্দাজ বাহিনীসহ বিশাল এক বাহিনী নিয়ে শেরশাহের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। 

১৫৪০ সালের ১৭ মে কনৌজের নিকটে বিলগ্রামে মুঘল ও আফগান বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধেও হুমায়ূন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন এবং কোনো মতে তিনি জীবন নিয়ে পলায়ন করেন। এ যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে হুমায়ূন ভারতবর্ষ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বে হুমায়ূন প্রথমের দিকে আফগান শক্তিকে ভালোভাবে দমন করার সক্ষমতা দেখালেও পরবর্তীতে তারই ভুলের কারণে আফগান শক্তি আরো বেশি জাগ্রত হয়। 

যা মুঘল ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ দ্বন্দ্বে সাময়িকভাবে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং নতুনভাবে আফগানদের উত্থান ঘটে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ