শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর

শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর
শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর

শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর

  • অথবা, জনগণের কল্যাণের জন্য শেরশাহ কি কি করেছিলেন?
  • অথবা, শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলির বিবরণ দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : শেরশাহ ছিলেন একজন মহান শাসক । তিনি তার অনন্য প্রতিভা দ্বারা মুঘল সাম্রাজ্যের মাঝে ভারতবর্ষে আফগান শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। 

তবে শেরশাহের সবেচেয়ে বেশি অবদান হচ্ছে তার প্রবর্তিত শাসন সংস্কার ও জনহিতকর কার্যাবলি। যার দরুণ শেরশাহ সর্বশ্রেষ্ঠ শাসকদের সারিতে নাম লিখিয়েছিলেন ।

→ শেরশাহের জনহিতকর কার্যাবলি : শেরশাহ তার জীবদ্দশায় তথা শাসনামলে বেশ কিছু জনহিতকর কাজ সাধন করেছেন। 

নিম্নে শেরশাহের জনহিতকর কাজগুলো আলোচনা করা হলো :

১. রাস্তাঘাট নির্মাণ : শেরশাহের আমলে ভারতবর্ষে অসংখ্য নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরাতন রাস্তার সংস্কার করা হয়েছিল। তার সময়ের গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড প্রায় ১৫০০ মাইল বিস্তৃত ছিল। তাছাড়াও তিনি রাস্তার পাশে পথিকদের সুবিধার জন্য ছায়াপ্রদ বৃক্ষরোপণ করেন।

২. গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড : ঐতিহাসিক আর.সি. মজুমদার বলেছেন, “শেরশাহ যে সমস্ত বড় শহর নির্মাণ করেছেন সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ, সুন্দর ও প্রশস্ত ছিল গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড। 

সড়কে আযম নামে অভিহিত এ রাস্তা বাংলার সোনারগাঁও হতে সিন্ধুর অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি প্রায় ১৫০০ মাইল বিস্তৃত। পথিককে সূর্যের উত্তাপ থেকে রক্ষার জন্য রাস্তার উভয়পার্শে ছায়াদানকারী বৃক্ষ রোপণ করেন ।

৩. শিক্ষার প্রসার : শেরশাহ শিক্ষার একজন একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি শিক্ষার উন্নতিকল্পে বিভিন্ন স্থানে অনেক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন এবং বহু পুরাতন প্রতিষ্ঠান মেরামত করেন।। তিনি ছাত্র ও শিক্ষকদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা চালু করেন।

৪. সরাইখানা নির্মাণ : রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় পথিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শেরশাহ বিভিন্ন স্থানে সরাইখানা নির্মাণ করেন। এখানে খাওয়া-দাওয়া ও রাত্রি যাপনেরও ব্যবস্থা ছিল।

৫. বৃত্তির ব্যবস্থা : শেরশাহ নিজে ছিলেন প্রতিভাধর এবং পাণ্ডিত্যের অধিকারী একজন ব্যক্তি। তাই রাজ্যের শিক্ষা দীক্ষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই মনযোগী। 

তিনি শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করতেন। এমনকি এসকল প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য শেরশাহ বৃত্তির ব্যবস্থা করেন।

৬. মুক্ত হস্তে দান : শেরশাহ ছিলেন যেমন কঠোর ঠিক তেমনি একজন দয়ালু ও উদার শাসক। তিনি বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যার্থে যুক্ত হস্তে দান করতেন। বহু এতিমখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে চলত।

৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন : শেরশাহের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। তার পূর্বে ভারতবর্ষে যোগাযোগ ব্যবস্থা তত ভালো ছিল না। 

তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য এবং যাতায়াতের সুবিধার জন্য বহু রাস্তা নির্মাণ করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গের সোনারগাঁ থেকে সিন্ধুদেশ পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ১৫০০ ক্রোশ দীর্ঘ গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেন।

এড ট্রাংক রোড ছাড়াও আত্মা হতে বুরহানপুর, যোধপুর ও চিতোর দুর্গ এবং লাহোর থেকে মুলতান পর্যন্ত যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাস্তা তৈরি করেন । 

৮. ঘোড়ার ডাক চালু : শেরশাহ মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি করার দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিভিন্ন রাজ্যসমূহের সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য ঘোড়ার ডাক প্রথা চালু করেন। এ ডাক ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ডাকবিভাগ নামে আলাদা একটি বিভাগ চালু করেন।

৯. অট্টালিকা নির্মাণ : শেরশাহ তার সময়ে সুন্দর সুন্দর অনেকগুলো অট্টালিকা নির্মাণ করেন। তার নির্মিত অট্টলিকাগুলোর মধ্যে পুরোনো কিল্লা মসজিদ সবচেয়ে সুন্দর। তাছাড়া সাসারামে হ্রাসের মধ্যে তার নিজ সমাধি সৌধও খুবই নয়নাভিরাম।

১০. অন্যান্য কার্যাবলি : শেরশাহ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে। পান্থশালা, মসজিদ, মন্দির, পাঠাগার ও কূপ খনন করেন। সাধু পুরুষের নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা ও দুঃস্থ ব্যক্তিদের জন্য লঙ্গরখানা স্থাপন করেন। তিনি জনসাধারণের কল্যাণের জন্য মুক্ত হস্তে দান করতেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শেরশাহ ছিল জনগণের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তিনি যে সকল অনহিতকর কার্যাদি সম্পাদন করেন তা পরবর্তীতে অন্যান্য শাসকদের উন্নয়ন কাজ করতে উৎসাহী করে। তার জনহিতকর কার্যাবলি তাকে ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ