ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো । আমাদের গুগল নিউজ ফলো করুন।.

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো

  • অথবা, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি বর্ণনা কর । 
  • অথবা, ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষা নীতি আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার ক্ষমতা দখল করে মুঘল শাসকদের নিকট থেকে দেওয়ানি লাভ করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। 

এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তারা এদেশের মানুষের মুখতা ও সরলতার সুযোগে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার করে। 

একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা আন্তরিকভাবে কখনোই চাইনি এদেশে শিক্ষাদীক্ষার বিস্তার ঘটাতে। তারা সবসময় চেয়েছে এদেশের মানুষকে গোলাম বানিয়ে রাখতে। 

আর তাই তারা বিভিন্ন নিয়মনীতির মাধ্যমে এ দেশবাসীকে শোষণ করে। তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয়।

১. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার পরে ব্রিটিশ রাজ সরকার ভারতবাসীর শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে বিশেষ কোনো গুরুত্ব দেয়নি। 

তারা সবসময় ভারতবাসীর শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন ছিল। ভারতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কম বেতনে ভারতে একটা ইংরেজি শিক্ষিত কেরানির দল সৃষ্টি করা।

২. মেকেলের মন্তব্য : লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর পরিষদের আইন সদস্য লর্ড মেকেলের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত প্রাণপণ চেষ্টা দ্বারা ভারতে এমন এক শ্রেণির মানুষ তৈরি করা যারা আমাদের বক্তব্য আমাদের শাসনাধীন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। 

শুধু গায়ের চামড়ার কৃষ্ণবর্ণ এবং জন্মসূত্রে ভারতীয় এই শ্রেণির মানুষগুলোকে রুচি, মতামত, নীতিবোধ ও বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে পুরোপুরি ইংরেজরূপে গড়ে তোলা।"

৩. স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা চালু করেন। ১৭৯১ সালে জোনাসন ডানকান বারানসীতে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৮০০ সালে লর্জ ওয়েলেসলি ব্রিটিশ কর্মচারী দেশীয় ভাষা ও আদব কায়দা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৮১৩ সালের চার্টার আইনে প্রথম ভারতে শিক্ষাবিস্তারে ব্রিটিশদের দায়িত্বের কথা স্বীকার করা হয় এবং ১৮১৭ সালে শিক্ষার মানোন্নয়নে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়। 

১৮১৭ সালে ডেভিড হিউম কলকাতা হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩৫ সালে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের উচ্চশিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয় উডস ডেসপ্যাচ অন এডুকেশন। চার্লস উডের এই ডেসপ্যাচকেই ব্রিটিশ ভারতের শিক্ষার ম্যাগনাকার্টা বলা হয়।

এখানে চার্লস প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কিভাবে বিন্যাস করা হবে তা আলোচনা করেন। তাছাড়া নারী শিক্ষার গুরুত্বারোপ করেন। 

নারীদের শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন। কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। কলকাতা, মোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

→ শিক্ষাবিস্তারে গঠিত বিভিন্ন কমিশন :

১. হান্টার কমিশন (১৮৮২-১৮৮৩) : ওয়ার্ডসের অনুরোধে লর্ড রিপন ভারত সরকারের শিক্ষানীতি পুনরালোচনা করার জন্য এক সদস্যের হান্টার কমিশন গঠন করেন। 

এই কমিশন জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে সরকারের গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা, সাক্ষরতা ও বাণিজ্যিক শিক্ষার বিস্তারেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হান্টার কমিশন। 

শুধু তাই নয়, নারী শিক্ষার বিস্তার ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপের জন্যও সুপারিশ করেছিলেন। এরপর ১৮৮২ সালে পাঞ্চাৰ বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৮৮৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

২. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন : ১৯০৪ । লর্ড কার্জনের সময়ে ১৯০৪ সালে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস ও কার্যকর হয়। ১৯০১ সালে সিমলা শিক্ষা সম্মেলনের পর লর্ড কার্জন স্যার টমাস কমিশন গঠন করেন। 

এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইন পাস হয়। গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই কমিশনের সদস্য ছিলেন। এই আইন চালু হওয়ার পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোদের মনোনীত করার অধিকার পায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ব্যাপারে সরকারের ভেটো প্রয়োগের অধিকার দেয়া হয়। 

৩. স্যাডলার কমিশন (১৯১৭-১৯) : ১৯০৬ সালে দেশীয় প্রাথমিক শিক্ষা রাজ্য বরোদা রাজার আদেশে রাজ্যে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য গঠিত হয় স্যাডলার কমিশন। 

আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও জিয়াউদ্দিন এই কমিশনে ছিলেন। ১৯১৯ সালে স্যাডলার কমিশন উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সুপারিশ করেন। স্যাডলার সুপারিশ করেন ইন্টারমিডিয়েটের পর ৩ বছরের ডিগ্রি কোর্স রাখা উচিত। 

নারী শিক্ষায় আরও গুরুত্বারোপ করা দরকার। শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুযোগ আরও বৃদ্ধি করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকা এবং আবাসিক ও বোর্ডিং সুবিধাযুক্ত হওয়া উচিত ।

৪. হার্টোগ কমিশন : ১৯২৯ : হার্টোগ কমিশন জাতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলে। এই কমিশন তহবিল সঞ্চয় ও উন্নয়ন নীতির উপর জোর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়।

৫. বুনিয়াদি শিক্ষাক্ষেত্রে ওয়ার্থা পরিকল্পনা : ১৯৩৭: ১৯৩৭ সালে মহাত্মা গান্ধী হরিজন পত্রিকায় শিক্ষা বিস্তারে একগুচ্ছ পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন। এটাই বুনিয়াদি শিক্ষা বা ওয়ার্থা কিম নামে পরিচিত।

এই পরিকল্পনার মূল কথা হলো কাজের মাধ্যমে শিক্ষা, জাকির হুসেন কমিটি এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পর্যালোচনা, পরীক্ষা ও শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রস্তাব করে।

৬. সারজেন্ট পরিকল্পনা : ১৯৪৪: এই কমিশন ভারতে বুনিয়াদি শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয় স্থাপনের উপর জোর দেন। ৬-১১ বছর বয়সী সকল শিশুর অবৈতনিক শিক্ষার সুপারিশ করা হয়। 

উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে একাডেমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল এই দুই ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়। এই কমিশনে ইন্টারমিডিয়েট বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ সরকার ভারতে শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীন ছিল। এখানকার শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। 

শুধুমাত্র ভারতে একটা অধস্তন শ্রেণি তৈরি করতে চেয়েছিল। যারা ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইংরেজদের অধীনে কেরানির চাকরি করবে আর এর বিনিময়ে তারা ব্রিটিশ সরকারের অনুগত থাকবে।

ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল এই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ইংরেজ ভাবা পুষ্ট শ্রেণি হবে তাদের পণ্যের বিশাল ভোক্তা শ্রেণি। 

আর এর মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ভারতে নিজেদের ক্ষমতা চালাতে পারবে। মূলত এসব কারণেই তারা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো। যদি তোমাদের আজকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষানীতি আলোচনা করো পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ