কালাউনের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর
কালাউনের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর |
কালাউনের জনহিতকর কার্যাবলি আলোচনা কর
- অথবা, কালাউনের জনহিতকর কার্যাবলি লিখ।
উত্তর : ভূমিকা : মুসলিম রাজত্বের ইতিহাসে মিশরের মামলুক বংশের শাসন নানা কারণে আকর্ষণীয়। এ মামলুক শাসনামলে সুলতান কালাউন ছিলেন একজন উল্লেখযোগ্য শাসক।
তিনি দেশের সমৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন জনহিতকর কার্যে মনোনিবেশ করে মিশরকে এক সুশৃঙ্খল ও স্বনির্ভর জাতিকে পরিণত করে।
→ কালাউনের জনহিতকর কার্যাবলি : কালাউন ছিলেন একজন জনদরদি ও প্রজাবৎসল শাসক। নিচে তার জনহিতকর -কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. যোগাযোগ ও ডাক বিভাগের উন্নতি : কালাউন জনসাধারণের উন্নতি এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সাম্রাজ্যের সব জায়গা অসংখ্য রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপণ এবং দুমাইল অন্তর সরাইখানা ও বিশ্রামাগার তৈরি করেন।
জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি ডাক বিভাগেরও উন্নতিসাধন করেন। এছাড়া তিনি পথচারিদের নিরাপত্তার জন্য তিনি রাস্তায় রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করেন।
২. চিকিৎসা বিদ্যা : কায়রোর উপকূলে নির্মিত আল মারিস্তান আল মনসুরী হাসপাতাল সুলতান কালাউনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। তিনি এ হাসপাতাল সংলগ্ন একটি সমাধি, মাদ্রাসা ও মসজিদ নির্মাণ করেন।
হাসপাতালে প্রত্যেক রোগের জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ ছিল। এখানে মহিলাদের জন্য পৃথক মহিলা ডাক্তারও ছিল এবং ধনী-দরিদ্র সকলে এখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিতে পারতেন।
৩. জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকতা : মামলুক সুলতান কালাউন একজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ফলে তার সময়কালে জ্ঞানী-গুণীর সমাবেশ ঘটে। যারা জনসাধারণের উপকারে জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেন।
যেমন— কালাউনের ‘আল মারিস্তান আল মনসুরী, হাসপাতালের অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলী ধমনীতে রক্ত চলাচলের সুস্পষ্ট ধারণা আবিষ্কার করেন ।
৪. রাজ্যের ঐক্য ও সংহতি : তিনি রাজ্যের জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করে মিশরীয় রাষ্ট্রের ঐক্য ও সংহতি সুনিশ্চিত করেন।
৫. স্থাপত্য শিল্পে অবদান : সুলতান কালাউন মিশরের জনগণকে উন্নত জীবন দান করার জন্য হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অট্টলিকা নির্মাণ করেন। আলেপ্পো ও দামেস্কের দুর্গগুলোও সংস্কার করেন। এগুলোর সংস্কার ও নির্মাণশৈলী ছিল অসাধারণ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান কালাউন বিজ্ঞ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন জনদরদী শাসক। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি প্রজাদের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন।