মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি আলোচনা কর

মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি আলোচনা কর
মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি আলোচনা কর

মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি আলোচনা কর

  • অথবা, মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি বর্ণনা কর। 

উত্তর : ইতিহাস পঠন-পাঠনে যে সকল বিষয় খুবই গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়, তার মধ্যে মিশরে মামলুক বংশ অন্যতম। 

আইয়ুবী বংশের ধ্বংসস্তূপের উপর মামলুক বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে দীর্ঘকাল মুসলিম বিশ্বের সেবা প্রদান করেছে। মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি ছিল এক চমকপ্রদ বিষয়।

মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি আলোচনা পূর্বে আমাদেরকে জানা প্রয়োজন মামলুক কারা।

মামলুক কারা : আরবি মালাকা শব্দ থেকে মামলুক শব্দের উদ্ভব। মামলুক শব্দের অর্থ ক্রীতদাস, দাস, চাকর, শ্রমদাস ইত্যাদি। প্রাচীন মিশরে যুদ্ধবন্দীদেরকে মামলুক নামে অভিহিত করা হত। 

সুতরাং যুদ্ধবন্দী বা কৃতদাস সম্প্রদায়কেই মামলুক বলা হয়। উরাল পর্বতমালা এবং কান্দিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী কিপচাক অঞ্চলে ছিল এই মামলুকদের আদিবাসস্থান। তারা ছিল তুর্কিদের কুমান শাখার অধিবাসী।

মিশরে মামলুকদের উৎপত্তি : মিমরের তৎকালীন আইয়ুবী সুলতান মালিক আস সালিহ তার সেনাবাহিনী ও দেহরক্ষী বাহিনীতে অনেক ক্রীতদাসকে নিয়োগ প্রদান করে। 

ফলে অন্যান্য দাসদের সাথে মামলুক তুর্কিরাও আইয়ুবী সেনাবাহিনী ও দেহরক্ষী বাহিনীতে প্রবেশ করেন। এদিকে আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাসিম বিল্লাহ তার হেরেমের অপূর্ব সুন্দরী দাসী শাজার উদ-দারকে উপহারস্বরূপ মিশরের আইয়ূবীয় সুলতান মালিক আস-সালিহের নিকট প্রেরণ করেন। 

শাজার-উদ-দার নিজেও একজন তুর্কি মামলুক ছিলেন। তিনি কৌশলে মালিক-আস সালিহ-এর প্রিয় হয়ে ওঠেন। মালিক আস সালিহ তাকে ক্রীতদাসী থেকে মুক্তি দিয়ে বিয়ে করেন। ফলে শাজার উদ-দারের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় ।

১২৪৯ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুবী সুলতান মালিক আস সালিহ মৃত্যুবরণ করেন। আস সালিহের পুত্র ভুরান শাহ ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পিতার মৃত্যুর সময় উপস্থিত ছিলেন না। 

শাজার-উদ-দার ডুরান শাহ-এর পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। ভুরান শাহ ফিরে এসে আইয়ূবীয় সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

শাজার-উল-দার সেনাপতি বাইবার্স-এর সহযোগতায় ১২৫০ সালের ২ মে ভুরান শাহকে হত্যা করেন এবং মিশরের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সিংহাসনে আরোহণ করেন। এরই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় মামলুক রাজবংশ এবং মিশরে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলুকদের উৎপত্তি ঘটে।

শাজার-উদ-দারের রাজত্বকাল ছিল মাত্র ৮০ দিন। তিনি একজন নারী হওয়ায় আমরি ওমরাহগণ বিরোধিতা করতে থাকে। 

ফলে তিনি আরেক মামলুক ইজ্জাতদিন আইবেককে বিয়ে করে, তার হাতে মিশরের শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দেন। আর এ মামলুকরাই ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিশরের শাসন ক্ষমতায় ছিলো।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মিশরে মামলুক বংশের উৎপত্তি ও তাদের শাসনকাল ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ মামলুকরা মিশরের স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধিতে যে অবদান রেখেছে, তা কখনও ভুলার নয়। 

উত্থান-পতনের নিয়মের সাথে তাল মিলিয়ে একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে এ মামলুক শাসক বংশের পতন ঘটে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ