প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলোচনা কর
প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলোচনা কর

প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলোচনা কর

  • অথবা, প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : প্রাচীন বাংলায় সর্বভারতীয় শাসকদের দ্বারা বাংলার ধর্মনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে দেখা গিয়েছিল। 

যেহেতু প্রাচীন বাংলা বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত ছিল এবং অঞ্চলের জনগণকে ধর্মীয়ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। যার ফলে প্রাচীন বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি হয়।

→ প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় জীবন : খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক নাগাদ সগর্ব হয়ে পুণ্ড্র, রাঢ়, সূক্ষ্ম ও তাম্রলিপ্ত পর্যন্ত আর্য সভ্যতা বিস্তৃত ছিল । যাই হোক প্রাচীন বাঙালিরা যে প্রভৃতি পূজা করতো একথা নিশ্চিত।

তারা নদী-নালা, বৃক্ষ, সাপ, পাখি, পাহাড়, পর্বত ইত্যাদি বিষয়ে পূজা করতো। সে সময়ে নবান্ন, ষষ্ঠী, অষ্টমী ইত্যদি রীতিগুলো প্রচলিত ছিল। 

তবে তেরশত শতকের দিকে বাংলার ধর্মীয় জীবনব্যবস্থা অনেকটা সহজ হয়েছিল। নিচে তা আলোচনা করা হলো :

১. গুপ্ত যুগের ধর্মীয় জীবন : ম্যাক্সমুলার বলেছেন যে, ব্রাহ্মণ ধর্ম এবং সংস্কৃত সাহিত্যের অভাবনীয় অবগতি থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, গুপ্তযুগে হিন্দুধারার পুনর্জন্ম ঘটেছিল। 

বৌদ্ধ ও হিন্দুর মধ্যে দ্বন্দ্ব, দ্বেষ, সংঘাত, বৈষম্য কোনো কিছুর দৃষ্টান্তই মিলে না। বরং দেখা যায় যে, উভয় ধর্মের মানুষের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান ছিল। 

হিন্দুধর্মের বর্তমান রূপ যেন গুপ্ত যুগে সৃষ্টি হয়েছে। বেদে যজ্ঞাদি যে অনুষ্ঠানের কথা বলেছিল তা বহু পূর্ব হতেই অবিচলিত হয়েছিল। 

শিব, বিষ্ণু দেবী বা অন্য কোনো নামে ব্যক্তিরূপে দেবতার আবাহন ও উপাদণার প্রচলন গুপ্তযুগে বহুল পরিমাণে দেখা যায়। 

রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ স্মৃতি প্রভৃতিও গুপ্তযুগের বর্তমান আকারে লিপিবন্ধ হওয়ার তাৎপর্য খুবই বেশি। ভারতবর্ষের জনসংখ্যার বহুলাংশ যে হিন্দু সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত হয়ে এসেছে তারই বিচিত্র ও নব উন্মেষশালী রূপ গুপ্ত শাসনকালে প্রকাশ পেয়েছিল। 

অনেকে মনে করেন থাকেন বৌদ্ধভাবধারার প্রধান সম্ভাবনাময় শঙ্কিত হয়ে তাকে প্রতিহত করার জন্য ব্রাহ্মণ ধর্মের অনুসারীরা এক উদ্যোগে নেমেছিল। তবে জনসাধারণের মধ্যেও বৌদ্ধ, হিন্দু | প্রতিযোগিতার কোথাও কোনো চিহ্ন দেখা যায় নি।

২. পাল ও চন্দ্র যুগ : পাল যুগে হিউয়েন সাং বাংলায় ভ্রমণে আসেন। তখন বাংলায় এক বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছিল। এ বাংলায় প্রাচীনকালে খ্রিষ্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম সবাই সামজ্ঞস্য বিধান করে চলত। 

কিন্তু পাল যুগে এসে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক অবনতি ঘটে। পালবংশ পরিপূর্ণভাবে বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠা করার পর বৌদ্ধধর্মের উন্নতি ঘটে। 

শুধু তাই নয় বৈদিক ধর্ম, বৈষ্ণবধর্ম, শৈব ধর্ম, শক্তিধৰ্ম, জৈনধর্ম প্রভৃতি ধর্মেরও অগ্রগতি গর্বিত হয়। পাল ও চন্দ্র যুগে দুটি ধর্মমতের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। 

"অহিংস পরম ধর্ম” এবং “জগতের সব প্রাণী সুখী হোক” এ মত দুটি সবাই সূচারু রূপে পালন করার | চেষ্টা করতো। সেযুগে বৌদ্ধধর্মের উন্নতির জন্য বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও মঠ গড়ে উঠেছিল। 

বিশেষ করে পাল রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এসব বিহার গড়ে উঠেছিল। 

প্রাচীন বাংলায় সকল ধর্মমতের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছিল। পালগণ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হলেও অন্যান্য ধর্মগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।

সেন যুগের ধর্মীয় অবস্থা : ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রাচীন বাংলার পালবংশের পতনের পর উত্থান ঘটে সেনবংশের। সেনবংশের সেনরা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। 

তাই তাদের উত্থানের ফলে বৌদ্ধ ধর্মের চরম অনতি ঘটে। বৌদ্ধগণ চরমভাবে বৌদ্ধ বিদ্বেষী ছিলেন। তারা প্রাচীন বাংলার সমাজে বর্ণপ্রথা, শ্রেণিপ্রথা ও কৌলিন্য প্রথা চালু করেন। 

সেন রাজাগণ বাংলাকে এমন এক পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছিলেন যে, বৌদ্ধ, ধর্মাবলম্বীগণ অনেকে বাধ্য হয়ে বা প্রাণের ভয়ে হিন্দুধর্মে ধর্মান্ত রিত হতে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, সেন শাসকরা অসহিষ্ণুতা ও শ্রেণিভেদ প্রথার ব্যাপক অপপ্রয়োগ চালায়।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, প্রাচীন বাংলায় বৌদ্ধধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম ও হিন্দুধর্মের লোকের বসবাস ছিল। তারা একে অপরের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে চলছিল। 

যদিও পরবর্তীতে তার চরম বিপর্যয় ঘটে। তবে যাই হোক প্রাচীন বাংলার ধর্মীয় অবস্থা সহানুভূতিপূর্ণ ছিল। সে সময় প্রাচীন বাংলায় বিভিন্ন মূর্তি ও প্রতিমা পূজা ছিল। 

এসব ছাড়াও শত শত প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করতো তারা। এখানকার আদিবাসীরা প্রাবিড় সংস্কৃতির সহস্র সহস্রাব্দের আবহমান প্রকৃতি পূজার সাথে এক পর্যায়ে বৈদিক তথা, সংস্কৃত সভ্যতার সংমিশ্রণ ঘটে যার পরিণত রূপ ছিল গুপ্ত শাসনামলের হিন্দু সংস্কৃতি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ