সুলতান কালাউন কে । সুলতান কালাউনের পরিচয় উল্লেখ কর

সুলতান কালাউন কে । সুলতান কালাউনের পরিচয় উল্লেখ কর
সুলতান কালাউন কে । সুলতান কালাউনের পরিচয় উল্লেখ কর

সুলতান কালাউন কে । সুলতান কালাউনের পরিচয় উল্লেখ কর

উত্তর : ভূমিকা : ১২৫০ সালে মিশরে আইয়ুবী শাসনের অবসান ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে মামলুক বংশের। মিশরের ইতিহাসে মামলুকদের শাসনকাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

সাজার- উদ-দারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বংশ বিভিন্ন আত্মকলহ ও গৃহবিবাদের সম্মুখীন হয়। ফলে সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্সের মৃত্যুর পর অযোগ্য ও অদক্ষ সুলতানদের জন্য মামলুক বংশ চরম হুমকির সম্মুখীন হয়। 

এ সময় মামলুক বংশের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন সুলতান কালাউন । ১২৭৯ সালে তিনি সুলতান সালামিশকে পদচ্যুত করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তাঁর সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে মামলুক বংশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করে ।

→ সুলতান কালাউনের পরিচয় : নিম্নে সুলতান কালাউনের পরিচয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :

১. প্রাথমিক পরিচয় : সুলতান কালাউন ১২২২ সালে কৃষ্ণসাগরের উত্তর তীরস্থ কিপচাক তুর্কি জাতির কুমান শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে তিনি অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন বলে আইয়ুবী সুলতান মালিক আস সালিহ তাকে ১০০০ দিরহাম দিয়ে ক্রয় করেছিলেন। 

সুলতান সালিহ কালাউনকে তাঁর দেহরক্ষী বাহিনীতে সাধারণ সৈনিক হিসেবে নিয়োগদান করেন।' কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি নিজ যোগ্যতাবলে সুলতানের দেহরক্ষী বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন।

২. কালাউনের প্রভাব বৃদ্ধি : সুলতান কালাউন ধীরে ধীরে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেন। সুলতান রুকনউদ্দিন বাইবার্স এর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সাঈদ আল বারকা সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন উচ্চাভিলাষী কালাউন তাঁর নিজ কন্যাকে সাঈদের সাথে বিয়ে দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।

৩. সালামিশের অভিভাবক : এদিকে সুলতান সাঈদের ভ্রাতা আল সালামিশ কৌশলে তাঁর ভ্রাতা সাঈদকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজেই সিংহাসনে আরোহণ করেন। 

সুযোগ সন্ধানী কালাউন তখন সাঈদের পক্ষ ত্যাগ করে সালামিশের পক্ষে যোগদান করেন এবং আল সালামিশের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন।

৪. সিংহাসনে আরোহণ : কালাউন ছিলেন একজন উচ্চাভিলাষী ও সুযোগ সন্ধানী মানুষ। সালামিশ তাঁর শাসনের ক্ষেত্রে যখন ব্যর্থতার পরিচয় দেন তখন ১২৭৯ সালে কালাউন অতিসহজেই ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সুলতান মালিক আল মানসুর সাইফুদ্দীন, কালাউন উপাধি ধারণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

ড. সুলতান কালাউনের কৃতিত্ব : নিয়ে সুলতান কালাউনের কৃতিত্ব তুলে ধরা হলো :

বিদ্রোহ দমন : সুলতান কালাউন সিংহাসনে আরোহণ করলে অন্যান্য আমির ওমরাহ তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। 

বিদ্রোহী প্রশাসক কারাশঙ্করকে দমনের জন্য সুলতান কালাউন একটি শক্তিশালী বাহিনী সিরিয়ায় পাঠালে কারাশঙ্কর পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।

মোঙ্গলদের দমন : কালাউনের দামেস্কের বিদ্রোহ দমনের সুযোগে মোঙ্গল নেতা আবাপা খান ও তাঁর ভাই মোঙ্গু খানের নেতৃত্বে একটি মোগল বাহিনী আলেপ্পো শহর দখল করে কায়রোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। 

ফলে সুলতান কালাউনের সাথে ১২৮০ সালের হিমসের প্রান্তরে মোঙ্গলদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মোগলরা পরাজিত হলে তাঁরা কালাউনের রাজত্বকালে আর মিশর আক্রমণে সাহস করেনি।

হাসপাতাল নির্মাণ : সুলতান সাইফুদ্দীন কালাউন তিনি | দরিদ্র প্রজা সাধারণের বিনামুল্যে চিকিৎসার জন্য আল মারিস্তান আল মনসুরী হাসপাতাল নির্মাণ করেন।

মসজিদ নির্মাণ : সুলতান কালাউন ব্যক্তিগত জীবনে একজন খাঁটি মুসলিম ছিলেন। তাই তাঁর সময় অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছিল।

জনহিতকর কার্যাবলি : সুলতান কালাউন ছিলেন একজন | জনহিতৈষী শাসক। জনগণের সুবিধার জন্য তিনি ডাক বিভাগের উন্নতিসাধন করেন। 

তাছাড়া পথচারী ও পর্যটকদের সুবিধার জন্য | তিনি রাস্তার নির্দিষ্ট দূরত্বে বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় সরাইখানা নির্মাণ করেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতান সাইফুদ্দীন কালাউন যদিও জোরপূর্বক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেছিলেন কিন্তু তিনি মোঙ্গল ও ক্রুসেডারদের দমন, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ কঠোর হস্তে প্রতিহতকরণ এবং বিভিন্ন জনহিতকর কার্যাবলির মাধ্যমে মামলুক সিংহাসনে যোগ্য শাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ