সুলতান কালাউনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোকপাত কর
সুলতান কালাউনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোকপাত কর |
সুলতান কালাউনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোকপাত কর
- অথবা, সুলতান কালাউনের বিদেশ নীতির পর্যালোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে এমন কিছু শাসকের আবির্ভাব ঘটেছিল যারা অত্যন্ত সাধারণ অবস্থা থেকে নিজ যোগ্যতা, মেধা, কর্মস্পৃহা, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতা দিয়ে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসের সেই বিরল যোগ্যতাসম্পন্ন শাসকদেরই একজন ছিলেন সুলতান সাইফুদ্দীন কালাউন। যিনি আইয়ুবীয় সুলতান সালিহের দেহরক্ষী বাহিনী থেকে ক্রমান্বয়ে মিশরের মামলুক সালতানাতের সিংহাসনে আরোহণ করার গৌরব অর্জন করেন।
সুলতান কালাউনের বৈদেশিক নীতি : সুলতান কালাউন ১২৭৯ সালে দুর্বল ও অযোগ্য সুলতান আল সালামিশকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজেই সিংহাসনে আরোহণ করেন।
এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিদ্রোহ দমন করে তিনি বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য তাঁর বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করেন।
নিম্নে সুলতান কালাউনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. মোঙ্গলদের দমন : ১২৭৯ সালে কালাউনের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সমনের সুযোগে মোঙ্গল অধিপতি আৰাগা খান এবং তাঁর ভাই মোঙ্গু খান আলেপ্পো শহর দখল করে নিয়েছিলেন।
ফলে মোঙ্গলদের দমনের জন্য কালাউন ১২৮০ সালে হিমসের প্রান্তরে মোগলদের সম্মুখীন হন। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে মোঙ্গলগণ এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আলেপ্পো ত্যাগ করে চলে যায়।
২. আজ্ঞার ভুলের সাথে সন্ধি : সুলতান কালাউন মোঙ্গলদের আলেপ্পো থেকে বিতাড়িত করার পর আন্তার তুসের টেম্পলারদের সাথে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেন। এই চুক্তি মতে আড্ডার ভূসের শাসকের সাথে কালাউনের ১০ বছরের জন্য শান্তি চুক্তি ঘোষিত হয়।
৩. ভায়ার, বৈরুত ও জেনোয়ার সন্ধি : এরপর সুলতান তায়ার ও বৈরুতের রানির সাথে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। ফলে রানি মার্গারেট তাঁর রাজ্যের অর্ধাংশ ২০ বছরের জন্য কালাউনের অধীনে ছেড়ে দেন।
এছাড়া এ সময় কালাউন রোমান পোপ ও ফ্রান্সের যে মৈত্রী জোট গঠিত হয়েছিল তাঁর প্রতিউত্তরে জেনোয়ার সাথেও একটি মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করেন।
৪. সিংহল ও চীনের সাথে সম্পর্ক : সিংহলের রাজা কালাউনের দরবারে একজন দূত পাঠালে, তিনি তাঁকে রাজকীয় সংবর্ধনা জানান। তাছাড়া এ সময় কালাউন চীনের সাথে তাঁর সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি বাণিজ্য বহর প্রেরণ করেছিলেন।
৫. ভারতের সাথে সম্পর্ক : এ সময় ভারতেও আলাউদ্দিন খলজির নেতৃত্বে একটি মামলুক তথা দাস বংশ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। ফলে কালাউন ভারতের সাথে তাঁর বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন, ফলে তাঁর উদ্যোগে এ সময় মিশরের একটি বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল ভারতবর্ষে আগমণ করলে মামলুকদের সাথে ভারতের সম্পর্ক উন্নত হয়।
৬. প্যালেস্টাইন ও আর্মেনিয়া বিদ্রোহ : প্যালেস্টাইনের বেদুইনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে প্রদেশে ব্যাপক লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। ফলে সুলতান কালাউন একটি শক্তিশালী বাহিনী প্যালেস্টাইনে প্রেরণ করে বেদুইনদের বিদ্রোহ দমন করে।
আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করেন। এছাড়া এ সময় আর্মেনিয়া অঞ্চলের প্রশাসক তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে সুলতান কঠোর হস্তে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন ।
৭. গোল্ডেন হোর্ডের মোঙ্গলদের সাথে সম্পর্ক : মোঙ্গলদের অপর অংশ তথা গোল্ডেন হোর্ডের মোঙ্গলদের সাথে সুলতান কালাউনের সম্পর্কের উন্নতি হয়। ফলে গোল্ডেন হোর্ডের মোঙ্গল এবং বাইজান্টাইন সম্রাটের সাথে সুলতানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন, মোঙ্গল ও ক্রুসেডারদের দমন করে বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন কালাউন।
তারই ধারাবাহিকতায় সুলতান আন্তার তুসের টেম্পলার, জেনোয়া, বৈরুত, গোল্ডেন হোর্ডের মোঙ্গল, সিংহল, চীন ও ভারতের সাথে তার বৈদেশিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করেন ।