হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিজয় সম্পর্কে আলোকপাত কর

হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিজয় সম্পর্কে আলোকপাত কর
হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিজয় সম্পর্কে আলোকপাত কর

হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিজয় সম্পর্কে আলোকপাত কর

  • অথবা, হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তারের বর্ণনা দাও।

উত্তর : ভূমিকা : রাজ্যবর্ধনের পর থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন হর্ষবর্ধন। রাজত্বের প্রথম দিক থেকেই তার মধ্যে রাজা সুলভ প্রবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়। 

শুরু থেকেই তিনি রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ দেন। অতঃপর রাজ্যসীমা বৃদ্ধিকল্পেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

→ হর্ষবর্ধনের রাজ্য জয় : থানেশ্বরের পুষ্যভূতি রাজাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ছিলেন হর্ষবর্ধন। তিনি সিংহাসনে আরোহণের পর থানেশ্বরের রাজ্যসীমা আরো উত্তোরোত্তোর বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

নিচে হর্ষবর্ধনের রাজ্য জয় সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হলো :

১. বাংলা জয় : চীনা লেখক মা-ভোয়ান-লিনের রচনা থেকে জানা যায় যে, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধন মগধ অধিকার করেন। ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি উড়িষ্যা ও কঙ্গোন বা গঞ্জাম অধিকার করেন। 

হয়তো এর আগেই তিনি এসকল অঞ্চল জয় করে থাকবেন। হর্ষবর্ধন শশাঙ্কর মৃত্যুর পর পশ্চিম বাংলায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

২. বলতী অর্থ : হর্ষবর্ধন কেবলমাত্র পূর্ব ভারতে রাজ্য জয় করেননি। গুজরাটের ধর্ম ও রাজপুতনার মালবদের সঙ্গে তাঁর বৈরিতা ছিল। এই শক্তিগুলো চালুক্যরাজ গুলকেশীর সাহায্যে তাঁকে অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে। 

হর্ষ এসের পুদিক থেকে বেষ্টন করে নেওয়ার জন্য বলভীরাজ ধ্রুব সেনকে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিতে বলেন। কিন্তু তিনি মেনে নেননি। ফলে হর্ষবর্ধনের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হন ধ্রুবসেন। বলভী হর্ষবর্ধনের অধিভুক্ত হয়।

৩. সিন্ধু নেপাল, কাশ্মীরের সঙ্গে সম্পর্ক : বৃহলার প্রভৃতি পণ্ডিতেরা মনে করেন যে, হর্ষ কাশ্মীর ও নেপাল অভিযান করেছেন। কিন্তু ড. সিলভ্যা লেভি এ মত খণ্ডন করেছেন তিনি বলেছেন হর্ষ কখনও নেপাল অভিযান করেন নি। 

হিউয়েন সাং এর বিবরণীতে জানা যায় যে, হর্ষ কাশ্মীর অভিযান করে কাশ্মীর রাজার কাছ থেকে একটি বুদ্ধ মূর্তি উদ্ধার করেন। কিন্তু এ সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ না থাকায় হর্ষ কাশ্মীর অধিকার করেন কিনা তা সঠিকভাবে জানা যায় নি। 

আবার অন্যান্য উৎস থেকে জানা যায় হর্ষবর্ধন সিন্ধু নেপাল, কাশ্মীর অভিযান করেছিলেন এবং এ সব অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় হর্ষবর্ধনের কতৃত্ব স্থাপিত হয়েছিল ।

৪. দ্বিতীয় পুলকেশীর সাথে দ্বন্দ্ব : হর্ষবর্ধন যখন উত্তর ভারতে তাঁর একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত ছিলেন সে সময় দক্ষিণে চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর ও তৃঙ্গভদ্রার উত্তর তীরে সমগ্র দাক্ষিণাত্যে আপন অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যক্ত ছিলেন। 

ড. মজুমদার এর মতে লাট বা গুজরাট মালব বা রাজপুতনাতরা অঞ্চলের শাসকেরা হর্ষবর্ধনের ভয়ে স্বেচ্ছায় দ্বিতীয় পুলকেশীর বশ্যতা স্বীকার করে নেন। 

এর ফলে নর্মদার উত্তরে রাজপুতানা ও গুজরাটে পুলকেশীর প্রভাব বিস্তৃত হয়। ফলে পুলকেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না হর্ষবর্ধনের। 

এছাড়া হর্ষবর্ধন গঞ্জাম পর্যন্ত জয় করার পর হর্ষবর্ধনের রাজ্য সীমা ও পুলকেশীর রাজ্যের সীমান্তকে স্পর্শ করে যা ছিল অন্যতম কারণ।

৫. নর্মদা যুদ্ধ হর্ষ পঞ্চ : ভারত হতে সেনা সংগ্রহ করে, নিজে পুলকেশীর দিকে এগিয়ে যান। স্মিথের মতে, হর্ষবর্ধন নর্মদা পার হয়ে দক্ষিণ পুলকেশীর রাজ্যে ঢুকে পড়লে তবে যুদ্ধ বাধে। 

ড. মজুমদার এ যুক্তি খণ্ডন করে বলেছেন, নর্মদার উত্তরে কোনো এক স্থানে এ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে দক্ষিণ বল্লমধারী সেনারা হর্ষবর্ধনকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। ড. এ. চ্যাটার্জির মতে ि

এর পরে গঞ্জাম হতে হর্ষবর্ধন পুলকেশীর পার্শ্ব ভেদ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। এভাবে হর্ষ উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ বিহার পশ্চিমবাংলা উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, নিয়ে বিশাল এক সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।

→ হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য সীমা : ড. K. M পানিক্কর তার সার্ভে অফ ইনডিয়ান হিস্ট্রি গ্রন্থে বলেছেন যে, বিন্ধ্য পর্বতের উত্তরে সকল দেশ নেপাল ও কাশ্মীর হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। 

এটি হাউজনের মতে, কামরূপ থেকে কাশ্মীর হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত ছিল হর্ষবর্ধনের রাজ্য সীমানা। 

ড. আর কে মুখার্জী মন্তব্য করেছেন যে, সকল সম্ভাব্য দিক বিচার করলে দেখা যায় যে, হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারতের সার্বভৌম সম্রাট বা অধিরাজ্যে পরিণত হন। ড. আর মজুমদার উক্ত মতের ব্যাপক সমালোচনা করেন ।

→ হর্ষবর্ধনের রাজ্য জয় ও শাসনব্যবস্থা : হর্ষবর্ধন রাজ্য জয় করার পর সাম্রাজ্যের উন্নতিকল্পে ও সমৃদ্ধিকল্পে তিনি সাম্রাজ্যের সব জায়গায় সঠিক পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন ব্যবসা শৃঙ্খলার সাথে করতে পেরেছিল শুধুমাত্র তাঁর কূটনৈতিক মেধার বলে । তাই হর্ষবর্ধনের রাজ্য জয় করাটা সার্থক হয়েছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন বীরত্বের সাথে তাঁর রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল । এক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট সফলতার পরিচয় বহন করেন। 

হর্ষবর্ধন তার নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতার বলে এত বড় একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করে থানেশ্বরের সিংহাসনের পূর্ণ মযার্দা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কারণে হর্ষবর্ধনের শাসনামল বিশেষভাবে স্মরণীয় 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ