প্রকৃতি পুঞ্জ কি। প্রকৃতি পুঞ্জ গৃহীত পদক্ষেপের পরবর্তী প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে লিখ
প্রকৃতি পুঞ্জ কি। প্রকৃতি পুঞ্জ গৃহীত পদক্ষেপের পরবর্তী প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে লিখ |
প্রকৃতি পুঞ্জ কি। প্রকৃতি পুঞ্জ গৃহীত পদক্ষেপের পরবর্তী প্রভাবসমূহ সংক্ষেপে লিখ
- অথবা, প্রকৃতি পুঞ্জ বলতে কি বুঝ? প্রকৃতি পুঞ্জের গৃহীত পদক্ষেপ বাংলায় কি প্রভাব ফেলেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন শাসকের উত্থান ও পতন ঘটেছে। মৌর্য সাম্রাজ্যের পর গুপ্ত সাম্রাজ্য বাংলা শাসন করে।
গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন না থাকায় চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ সময় এক শতাব্দীকাল ছিল বাংলার ইতিহাসে অন্ধকার যুগ।
এ সময় এই খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নেতা ও প্রজা সকলেই একটি সমাধান খুঁজছিল। এক সময়ে বাংলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মিলে গোপাল নামে এক ব্যক্তিকে বাংলার সিংহাসনে বসায়, এরপর থেকে বাংলায় ধারাবাহিক একটি শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতে থাকে এবং সমাজে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
প্রকৃতিপুঞ্জের পরিচয় : তিব্বতী বৌদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ ও খালিমপুর তাম্রলিপির বয়ান অনুসারে, গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর এক শতাব্দী কাল ছিল বাংলার ইতিহাসে ঘোর অরাজকতা ও গৃহবিবাদের যুগ।
বাংলার ইতিহাসে এই যুগটি মাৎস্যন্যায় নামে পরিচিত। মৎস্য জগতে বড় মাছ যেমন ছোট মাছকে গিলে খায়, তেমনি বাংলায় এই সময় শক্তিমানেরা দুর্বলদের উপর নিরন্তর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিল।
দেশের জনসাধারণে দুর্দশার অন্ত ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বাংলার প্রধান বন্দর তাম্রলিপ্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।
বাংলার এই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার হাত থেকে মুক্তি পেতে বাংলার প্রধান নাগরিকবৃন্দ গোপাল নামে এক জনপ্রিয় সামন্ত নেতাকে বাংলার রাজপদে নির্বাচিত করেন ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে। এই নির্বাচকমণ্ডলীর সমষ্টিকে ইতিহাসে প্রকৃতিপুঞ্জ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
→ প্রকৃতিপুঞ্জ গৃহীত পদক্ষেপের প্রভাব : প্রকৃতিপুঞ্জ কর্তৃক গোপালকে বাংলার শাসন ক্ষমতা অর্পণ করার পর বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।
নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অবসান : বাংলায় রাজনৈতিক অরাজকতার মুহূর্তে প্রকৃতিপুঞ্জে একটি অসামান্য দায়িত্ব পালন করেছেন।
যেখানে কোনো শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের অভাবে একটি রাজ্যে ১০০ বছর ধরে চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছিল রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে তখন প্রকৃতিপুঞ্জ গোপালকে রাজ সিংহাসনে বসিয়ে রাজ্যের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দায়িত্বটি পালন করেন।
এর ফলে রাজ্যে ফিরে আসে। প্রজারা স্বস্থির নিঃশ্বাস খুঁজে পায়। গোপাল সমগ্র বাংলা অধিকার করে শান্তি ফিরিয়ে আনে।
২. শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : প্রকৃতিপুঞ্জ কর্তৃক প্রবর্তিত বাংলায় পাল যুগ ইতিহাসে গৌরবময় এক অধ্যায়। এই প্রায় চারশত বাস করে। এ সময়ে তারা সত্য ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হয়।
সমগ্র উত্তর ভারত তাদের শাসনাধীনে না এলেও কনৌজ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করে পাল শক্তি উত্তর ভারতের রাজনীতিতে দৃঢ় পদক্ষেপের চিহ্ন রাখতে সমর্থ হয়েছিল।
পালদের অধীনেই উত্তর ভারতের রাজনীতিতে বাংলার প্রথম সাফল্যজনক বিস্তৃতি ঘটে। অবশ্য উত্তর ভারতে পালদের প্রতিপত্তি দীর্ঘকাল বজায় থাকেনি। তারপরও পালসের সামরিক কৃতিত্ব প্রশংসনীয় ছিল।
৩. সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা : পালদের সামরিক কৃতিত্বের চাইতে অধিকতর প্রশংসনীয় কৃতিত্ব তাদের সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা। পালদের তাম্রশাসনে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।
পাল সাম্রাজ্যে গ্রাম পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত স্তরীভূত সুবিন্যস্ত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল। রাজস্ব আদায় ছাড়া বিভিন্ন কর ও শুল্ক আদায়ের এবং ভূমি প্রশাসনের ছিল সুবিন্যস্ত অবকাঠামো।
প্রশাসনব্যবস্থা ছিল সর্বব্যাপী নদীপথ, স্থলপথ, ২ বসা-বাণিজ্য, নগর-বন্দর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সকল ক্ষেত্রেই প্রশাসনের নজরদারী ছিল কড়া। পালদের অব্যাহত চারশতক কাল শাসনের মূল ভিত্তিই ছিল তাদের সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা।
৪. ধর্মীয় সহনশীলতার পরিচয় : প্রকৃতিপুঞ্জ গৃহীত পদক্ষেপের প্রভাবের ক্ষেত্রে অন্যতম ছিল পাল রাজাদের ধর্মীয় উদারনীতি, পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ, কিন্তু বলা হয়ে থাকে যে, প্রজাদের অধিকাংশ ছিল হিন্দু, পাল রাজা গোপালের পুত্র ধর্মপাল ধর্মীয় সম্প্রীতির নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
হিন্দুদের দেবতা বা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সম্রাটদের অকুষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে রাজকীয় উচ্চপদসমূহে ব্রাহ্মণদের অধিষ্ঠিত হতে দেখা গেছে। তাই ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থান পাল যুগের সমাজ জীবনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
৫. পালরাজাদের প্রজাহিতৈষণা : প্রকৃতিকৃঞ্জ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পাল রাজাদের প্রজাতিতৈষণারও দৃষ্টান্ত রয়েছে, পাল রাজা ধর্মপাল বহুমূল্যের কয়েকটি দীঘি খনন করিয়েছিলেন ।
বাংলার বিভিন্ন প্রথম মহিপালের দিঘি খনন ও নগর প্রতিষ্ঠা সর্বজনবিদিত। পাল রাজাদের জনস্বার্থমূলক বহু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ তাদের কল্যাণমুখী শাসনের পরিচয় বহন করে।
এছাড়া পালযুগের গৌরবের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক শিল্পকলার ক্ষেত্রে। স্থাপত্য, পোড়ামাটির ফলক, ভাস্কর্য আর চিত্রকলায় পাল যুগের বিশেষ কৃতিত্ব পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রকৃতিপুঞ্জের অবদান অপরিসীম। বাংলার জনগণের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তারা গোপালকে রাজা নির্বাচন করেছিলেন।
আর গোপাল শাসন ক্ষমতা লাভ করে বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।
তিনি অস্থিতিশীল রাজ্যকে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন এবং তার পরবর্তী পাল শাসকরা রাজ্যবিস্তারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনেন ।
Thank you