মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখ

মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখ
মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখ

মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখ

  • অথবা, ‘মালজামিনী ব্যবস্থা' সম্পর্কে লিখ। 
  • অথবা, মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা সম্বন্ধে ধারণা দাও ।

উত্তর : ভূমিকা : ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খান বাংলার দিওয়ান নিযুক্ত হওয়ার পর বাংলায় ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন বা সংস্কার সাধন করেন তাই মালজামিনী ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

→ মালজামিনী ব্যবস্থা প্রবর্তনের কারণ : বাংলায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে মুর্শিদকুলি খানের দিওয়ানি লাভ পর্যন্ত বাংলায় ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় কোনোরূপ সুষ্ঠু ও সুনিয়ন্ত্রিত নীতি বা পদ্ধতি ছিল না। 

বাংলার প্রায় সমগ্র ভূ-ভাগ কর্মচারীদের বেতনের পরিবর্তে জায়গিরস্বরূপ বণ্টিত হয়ে গিয়েছিল। ফলে সরকারের খাস জমি বলতে কিছুই অবশিষ্ট ছিল না এবং ভূমি-রাজস্ব হতে সরকারের অর্থাগম ছিল না বললেই চলে। 

বাণিজ্য-শুল্কই ছিল রাজকোষের একমাত্র আয়ের পথ । ফলে ইউরোপীয় ও স্থানীয় বণিকদের উপর অত্যধিক চাপ পড়ায় বাণিজ্যেরও প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। 

এমতাবস্থায় মুর্শিদকুলি খান রাজস্ব সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রাজস্ব সংস্কার সংস্কার বা মালজামিনী ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

→ মালজামিনী ব্যবস্থার প্রকৃতি : মুর্শিদকুলি খান রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ অবলম্বন করেন। যথা- 

প্রথমত, মুর্শিদকুলি খান কর্মচারীদের জায়গিরগুলোকে সরকারের খাস জমিতে পরিণত করেন এবং তাদের জন্য উড়িষ্যার অনুন্নত ও জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে জায়গির নির্দিষ্ট করে দেন।

দ্বিতীয়ত, তিনি বাংলায় ভূমি জরিপের বন্দোবস্ত করেন। ভূমির পরিমাণ অনুসারে প্রজাদের খাজনা নির্ধারিত করে দেন। 

তিনি ভূমির উৎপাদন শক্তি কয়েক বছরের উৎপন্ন শস্যের বাৎসরিক গড় ইত্যাদি বিবেচনা করে এক-তৃতীয়াংশ শস্য ভূমিকর নির্ধারণ করেন এবং শস্যের মূল্যের বাৎসরিক গড় হিসাব করে টাকায় বিঘা প্রতি খাজনা নির্ধারণ করে শস্য বা টাকায় ভূমিকর প্রদানের নিয়ম প্রবর্তন করেন।

তৃতীয়ত, রাজস্ব আদায়ের ভার জমিদারদের পরিবর্তে ইজারাদারদের উপর ন্যস্ত করেন এবং তাদের সাথে জমি বন্দোবস্ত করে ইজারাদারি প্রথা প্রবর্তন করেন। সাথে সাথে জরিপের উপর ভিত্তি করে ইজারাদারদের দেয় রাজস্ব ধার্য করেন।

চতুর্থত, তিনি ইজারাদারদের গ্রাসাচ্ছাদনের “নানকার” নামক কর নির্দিষ্ট করে দেন এবং আমিলদের রাজস্ব আদায়ের খরচ হ্রাস করেন।

পঞ্চমত, সর্বোপরি রাজস্ব আদায়ের ফলে তিনি সমগ্র বাংলাকে ১৩টি চাকলায় ভাগ করেন। মুর্শিদকুলি খান কর্তৃক ভূমি-রাজস্ব ক্ষেত্রে প্রবর্তিত ও গৃহীত এ সকল ব্যবস্থাই মালজামিনী ব্যবস্থা নামে পরিচিত।

→ মালজামিনী ব্যবস্থার ফলাফল : মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থার ফলে বাংলার রাজস্বের যথেষ্ট উন্নতি হয়। এই ব্যবসা প্রবর্তনের ফলে পূর্ববর্তী রাজস্ব ঘাটতি দূর হয়ে ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। 

অন্যদিকে জমিদার ও ইজারাদারদের অতিরিক্ত কর প্রদান করা থেকে প্রজারা মুক্তি পায়। ফলে দেশে পূর্ণ শাস্তি বিরাজিত থাকায় প্রজাদের খাজনা দেবার সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুর্শিদকুলি খানের মালজামিনী ব্যবস্থা বাংলার ভূমি-রাজস্ব বন্দোবস্তের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে চিহ্নিত। 

পূর্ববর্তী অনিয়মতান্ত্রিক ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত মালজামিনী ব্যবস্থা ছিল। একটি সুষ্ঠু ও সুনিয়ন্ত্রিত নীতি ও পদ্ধতি । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ