রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর

রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর
রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর

রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ কর

উত্তরঃ ভূমিকা : রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম আলোচ্যবিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। ক্ষমতার বৈধ রূপই হচ্ছে কর্তৃত্ব। 

আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব ছাড়া ক্ষমতা দেখা যায় না। তাই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম ।

রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিভাগ : ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা: 

(i) সনাতন কৰ্তৃত্ব; 

(ii) আইনগত কর্তৃত্ব এবং 

(iii) সম্মোহনী কর্তৃত্ব।

১. সনাতন কর্তৃত্ব (Traditional authority) : সনাতন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রথা বা রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল। 

এটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত পুরাতন প্রথাভিত্তিক কর্তৃত্ব যার প্রতি যুগ যুগ ধরে সাধারণ জনগণের শ্রদ্ধাবোধ ও আনুগত্য রয়েছে এবং জনগণ প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যের পবিত্রতায় বিশ্বাস করে।

যেমন- ব্রিটেনের রাজা বা রাণীর কর্তৃত্ব। অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকেই সনাতন কর্তৃত্বের ধারণা উদ্ভূত হয়েছে।

২. আইনগত কর্তৃত্ব (Legal authority) : আইনগত কর্তৃত্ব সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি এবং যুক্তিবাদিতার উপর নির্ভরশীল। এরূপ কর্তৃত্বে কাল্পনিক তথা ভ্রান্ত ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের কোন স্থান নেই। 

আইনই হলো সকল ক্ষমতার উৎস। আইনগত কর্তৃত্ব হচ্ছে বৈধ রাজনৈতিক ক্ষমতা। এ কর্তৃত্বের বৈধতা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৃষ্ট নিয়মনীতির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোন দপ্তর থেকে পাওয়া যায়, যা অধিকার ও দায়িত্ব থেকে উৎসায়িত। 

এরূপ কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে পদটাকেই অধিক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। যেমন- একজন দপ্তর প্রধানের কর্তৃত্ব। এক্ষেত্রে অন্যদের আনুগত্য বিশেষ কোন ব্যক্তির প্রতি নয়, বরং আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি প্রযোজ্য।

৩. সম্মোহনী কর্তৃত্ব (Charismatic authority) : রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অন্যতম ধরন হচ্ছে সম্মোহনী কর্তৃত্ব । এটি অসাধারণ ব্যক্তিগত গুণসম্পন্ন কর্তৃত্ব যা সনাতন প্রথা বা আইনসংগতভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। 

এক্ষেত্রে ব্যক্তি কতিপয় অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী হয় যার দ্বারা সে সমাজের অন্যদেরকে প্রভাবিত করতে থাকে। সম্মোহনী নেতাগণ সাধারণ মানুষ থেকে স্বতন্ত্র ও আলাদা প্রকৃতির হয়ে থাকে। 

এরূপ কর্তৃত্বের প্রতি মানুষের আনুগত্য হলো সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। সাধারণত নেতার সাথে মানুষের বন্ধন ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে সম্মোহনী ক্ষমতার উদ্ভব ঘটে।

রাজনৈতিক কর্তৃত্বের একটি প্রাচীন রূপ সত্ত্বেও সম্মোহনী কর্তৃত্ব খুবই শক্তিশালী এবং ক্ষণস্থায়ী। যেমন- মার্টিন লুথার কিং, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ সম্মোহনী কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন। 

সম্মোহনী কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে একজন মানুষের ব্যক্তিগত গুণাবলিকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যক্তিগত গুণাবলির মাধ্যমে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক কর্তৃত্বের আদর্শিক তিনটি ধরন হচ্ছে সনাতনী, আইনগত এবং সম্মোহনী কর্তৃত্ব। 

তবে এটাও স্পষ্ট যে, যুগ বা সময় ও চাহিদার পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের শ্রেণিবিন্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ