গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান কি কি | গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান সমূহ আলোচনা কর

গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান কি কি । গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানগুলো লেখ
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান কি কি । গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানগুলো লেখ

গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান কি কি | গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান সমূহ আলোচনা

  • অথবা, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানসমূহ কী?

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। আর এ গ্রামপ্রধান দেশের অন্যতম প্রধান ক্ষমতা কাঠামো হলো গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো। 

বাংলাদেশের সমাজ বিকাশের ধারায় প্রধানত ঐতিহ্যগত, কখনও কখনও ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বই প্রধান ছিল । 

মুঘল আমলে যেহেতু পেশাগত বৈচিত্র্য কম ছিল এবং গ্রামগুলো মোটামুটি স্বনির্ভর ছিল। তবে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রায় একই ধারায় ক্ষমতা কাঠামো পরিচালিত হয়ে আসছে।

গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান : নিম্নে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদানসমূহ বর্ণনা করা হলো :

১. জনবল : জনবল গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম উপাদান। একটি গোষ্ঠীতে জনবল বেশি থাকলে তারা গ্রামে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। আর এ ক্ষমতা অর্জনে গ্রামের মানুষকে অধিক হারে সন্তানসন্ততি নিতে দেখা যায়। 

সাধারণত ঝগড়াবিবাদ, দখল এবং সামর্থ্যকে প্রকাশ করার জন্য গ্রামীণ জনবল বিভিন্ন শক্তি প্রকাশ করে থাকে। সুতরাং অধিক জনবল গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম উৎস।

২. অর্থনৈতিক শক্তি : অর্থনৈতিক শক্তি গড়ে ওঠে কৃষি ও কৃষিবহির্ভূত পেশার সমন্বয়ে। এটি গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । যেসব ব্যক্তিবর্গ গ্রামীণ সমাজে অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী তারা অন্য সকল ক্ষমতার অধিকারী । 

৩. সামাজিক নেতৃত্ব : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সামাজিক নেতৃত্ব। এ ধারায় গ্রামীণ ক্ষমতাবানদের নিয়ে গবেষণা করলেই দেখা যায়, তাদের ক্ষমতার পিছনে কাজ করে তাদের সমাজের নেতৃত্ব। 

একজন লোক সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তার ক্ষমতা প্রকাশ করার চেষ্টা করে । এ নেতৃত্বের ধরন আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের হতে পারে । তবে এ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ব্যক্তির গুণাবলি ও প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।

৪. জ্ঞাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব : গ্রামীণ জনসমষ্টি জ্ঞাতিসম্পর্কের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে জ্ঞাতির বন্ধন যত বড় তারা ক্ষমতার দিক থেকেও তত শক্তিশালী। গ্রামীণ ক্ষমতার কাঠামোতে একদল শক্তিশালী সম্প্রদায় তার জ্ঞাতিদের ক্ষমতা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

৫. আত্মীয়তা : আত্মীয়তা গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম উপাদান। অনেকে আত্মীয়তার জন্যও গ্রামে ক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকে । 

কারণ বৃহৎ আত্মীয় হলে অন্যান্য লোকজন তাদেরকে সমীহ করে চলে । গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর আত্মীয়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় রয়েছে। 

যেমন— পারিবারিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারী সূত্রে নেতৃত্ব লাভ, বৃহৎ বংশের নেতৃত্ব, নিজ জ্ঞাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব ও সমর্থন, ধনী, শিক্ষিত, শহরে ও পদমর্যাদাশীল ব্যক্তিদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি । 

৬. গ্রামীণ মোড়ল বা মাতব্বর : সাধারণত গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতার আধার হিসেবে গ্রামীণ মোড়ল বা মাতব্বররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । তারা গ্রামীণ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামো হতে একটু ভিন্ন । বিভিন্ন ক্ষমতা কাঠামো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। 

তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার যে, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে ইদানীংকালে কিছু পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে শিক্ষাকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর সর্বোৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ