লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লোকপ্রশাসনের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর।

লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর
লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

  • অথবা, লোকপ্রশাসনের উদ্ভব ও বিকাশ আলোচনা কর। 
  • অথবা, লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ বর্ণনা কর।

উত্তর ভূমিকা : সভ্যতার ক্রমবিকাশে মানুষ তার উর্বর মস্তিষ্কের উৎকর্ষসাধনের মাধ্যমেই নানাবিধ প্রতিকূল পরিবেশে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও মানবীয় চাহিদা পরিপূরণের প্রত্যাশায় গড়ে তুলেছিল দল, গোষ্ঠী ও সমাজব্যবস্থা। 

মানুষের জীবন যত আধুনিক হচ্ছে ততই বেড়ে যাচ্ছে জীবনের ব্যস্ততা, কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সব থেকে বড় ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। রাষ্ট্র ও সরকারের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্যই লোকপ্রশাসনের সূত্রপাত ঘটে।

লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ : আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থা প্রাচীন ও সাম্প্রতিককালের প্রশাসন ব্যবস্থার সমন্বিত রূপ। কালের বিবর্তনে ঘোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে 

যেমন- ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে প্রশাসনের চর্চা শুরু হয়। লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও বিকাশের বিভিন্ন ধাপ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১.অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথের বক্তব্য : ষোল শতাব্দী হতে আঠার শতাব্দীতে ইউরোপে যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করে সেখানে প্রশাসন কথাটি গুরুত্ব পায়। কী করে জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা যায় এবং কী উপায়ে মজবুত অর্থনীতির মাধ্যমে জাতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বাড়ানো যায় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

এডাম স্মিথ তার বিখ্যাত 'Wealth of Nations' (1776) এ বক্তবটি তুলে ধরেন। ব্যবসা বাণিজ্য জোরদার করে একটি শক্তিশালী সরকার সৃষ্টির পদ্ধতি হলো Laisess-faire বা বাণিজ্যের ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না করা।

২. লোকপ্রশাসনের চর্চা ও পাঠ্যক্রম: লোকপ্রশাসনের চর্চা শুরু হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রুশিয়ায় রাজকীয় চাকুরিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই প্রথম লোকপ্রশাসনের চর্চা শুরু হয়। 

ইউরোপীয় দেশ সুইডেনে প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক আইনের অধীনে বিশেষ পাঠ্যক্রম হিসেবে লোকপ্রশাসনের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে প্রশাসন একটি সুসংবদ্ধ বা বিজ্ঞানসম্মত বিদ্যা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

৩. লোকপ্রশাসনের ওপর প্রথম বই প্রকাশ : প্যারিসে সর্বপ্রথম ১৮০৮ সালে চার্লস বুনিন (Charles J. Bounin) নামক ব্যক্তি "Principles of Public Administration' নামে একটি বই লিখেন। এ বইটিতে লোকপ্রশাসনের নানা মৌলিক বিষয়সমূহ আলোচিত হয়।

৪. লোকপ্রশাসন বিকাশে ফ্রান্স ও স্পেন : ফ্রান্স কর্তৃক প্রভাবান্বিত হয়ে স্পেনে ১৮৩০ সালে লোকপ্রশাসন সম্পর্কে প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। ১৮৪২ সালে মাদ্রিদে একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া।

৫. প্রশাসনিক বিজ্ঞানের স্বীকৃতি : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোকপ্রশাসনকে বিভিন্ন নামে অধ্যয়ন করানো হতো। আঠারো শতাব্দীতে যুগোশ্লাভিয়ায় প্রশাসনিক বিজ্ঞান আইন অনুষদে পড়ানো হতো। ১৮৪৫ সালে সার্বিয়াতে 'প্রশাসনিক বিজ্ঞান' পাঠ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। 

১৮৫৬ সালে তুরস্কে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে 'Administration Science' সম্পর্কে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে উরুগুয়েতে ১৮৭৯ সালে ব্রাজিলে এবং চিলিতে ১৯০০ সালে। 'Administration Law বিষয়টি চালু হয়।

৬. আমেরিকায় লোকপ্রশাসনের বিকাশ : সমগ্র ইউরোপে লোকপ্রশাসনের বিস্তারের পূর্বে আমেরিকাতে এর প্রচার ও প্রসার অনেক দ্রুতগতিতে হয়। 

১৮৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন 'Political Science' নামক ত্রৈমাসিক পত্রিকায় The Study of Administration' নামক যে প্রবন্ধ লিখেন তা পরবর্তীতে প্রশাসনকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পিছনে প্রেরণা যুগিয়েছিল। 

১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসন সম্পর্কে ২৭টি প্রসিদ্ধ বই রচিত হয় এবং একই বছরেই L. D. White প্রথম আধুনিক বই 'Introduction to the Study of Public Administration' রচনা করেন।

৭. প্রশাসন ও রাজনীতির বিভক্তিকরণ : বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ফ্রাঙ্ক জে. পুড়নোও (Frank J. Goodnow) তার বিখ্যাত বই 'Politics and Administration' প্রকাশ করেন যেখানে তিনি রাজনীতি ও প্রশাসনকে ২টি ভাগে বিভক্ত করেন এবং যুক্তি দেখান যে, উভয়ই সরকারের ২টি স্বতন্ত্র কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।

৮. উড্রো উইলসনের ভূমিকা : উনিশ শতকের শুরু থেকেই লোকপ্রশাসনের ব্যাপক অগ্রগতি ও বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। যেখানে অনেক বড় অবদান রাখেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উড্রো উইলসন। 

১৮৮৭ সালে "Political Science Quarterly' নামক পত্রিকায় তার রচিত The Study of Political Science' প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। সেই প্রবন্ধে লোকপ্রশাসনকে একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ বিষয় হিসেবে প্রথম উপস্থাপন করা হয়। 

তাই ডুয়াইট ওয়াল্ডো (Dwight Waldo) উড্রো উইলসনকে লোকপ্রশাসন শাস্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বা জনক বলে অভিহিত করেন।

৯. বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা হিসেবে প্রশাসন : এফ ডব্লিউ টেইলর 'Principles of Scientific Management' এবং "Shop Management' নামে ২টি বই লিখেন যেখানে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। তিনি প্রশাসনকে একটি পেশায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন।

১০. হেনরি ফেয়ল ও তার অবদান : ফরাসি চিন্তাবিদ হেনরি ফেয়ল ১৯১৬ সালে General & Industrial Management' নামক পুস্তক রচনা করেন। এ গ্রন্থে ১৪টি যুক্তিসিদ্ধ ও শক্তিশালী নীতির কথা বর্ণনা করেন। তাই তাকে "আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক' বলে অভিহিত করা হয়।

১১. প্রশাসনকে বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি : ১৯৩৭ সালে লখার গুলিক (Luther Gullick) এবং এল. আরউইক (L. Urwick) এর প্রশাসন বিজ্ঞানসংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তারা উভয়েই প্রশাসনকে বিজ্ঞান হিসেবে চিহ্নিত করেন। লুখার গুলিক সংগঠনে ৪টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেন। যথা : 

ক. উদ্দেশ্য; 

খ. প্রক্রিয়া; 

গ. ব্যক্তি ও 

ঘ. স্থান।

১২. চেস্টার আই. বার্নার্ড, পিটার ড্রাকার, মেরি পার্কারের ভূমিকা : চেস্টার বার্নার্ড প্রশাসনকে একটি যৌথ ও সামাজিক কাজ বলে অভিহিত করেন। মিস মেরি পার্কার রচিত 'Dynamic Administration' এ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং আইন সম্পর্কে বলেছেন। ১৯৫৪ সালে পিটার ডাকার ব্যবস্থাপনার ব্যবহার সম্পর্কে বই লিখেন।

১৩. স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে লোকপ্রশাসন : একবিংশ শতাব্দীর ৫০ ও ৬০ এর দশকের তুলনায় ৭০ দশকে লোকপ্রশাসনের বিষয়বস্তু, কার্যক্রম ও পদ্ধতির গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পেশাগত ও একাডেমিক স্বীকৃতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ব্রিটেন, আমেরিকা কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা পেয়েছে।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আধুনিককালে লোকপ্রশাসন সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিক থেকেই লোকপ্রশাসন দ্রুত পরিবর্তিত ও সমৃদ্ধ হতে থাকে। 

আরও পরিবর্তন বৈশিষ্ট্যগতভাবে লোকপ্রশাসনকে একটি নতুন ও সুশৃঙ্খল বিজ্ঞানে পরিণত করার প্রয়াসে উদ্যোগী হয়। লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

সরকার ও রাষ্ট্রের নতুন নতুন অবস্থা ও প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মিলিয়ে লোকপ্রশাসনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লোকপ্রশাসনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ