কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি ।

কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি
কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি

কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি

উত্তর ভূমিকা : বর্তমান সমাজব্যবস্থায় কর্তৃত্ব একটি বহুল আলোচিত ধারণা। কর্তৃত্ব বলেই মানুষ অন্যকে আদেশ দিতে পারে, ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে এবং উচ্চ মর্যাদায় আসীন হতে পারে। 

আবার কর্তৃত্বের কারণেই মানুষ অন্যের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে ও হুকুম মেনে চলে । আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় কর্তৃত্বের কারণেই অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয়।

কর্তৃত্বের প্রকারভেদ : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে কর্তৃত্বকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা : 

১. আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব ও 

২. গ্রহণেচ্ছু কর্তৃত্ব । 

নিম্নে কর্তৃত্বের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো : 

১. আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব : আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় আইনের সুনির্দিষ্ট কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে। আইনগত ভিত্তি থাকায় এ ধরনের কর্তৃত্বকে বৈধ কর্তৃত্ব বলা হয় । 

এখানে যাবতীয় কর্মকাণ্ড আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাই সংগঠনের সব কর্মচারী এ ধরনের কর্তৃত্ব বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলে। প্রশাসনিক কাঠামোর বিধি অনুযায়ী এ ধরনের কর্তৃত্ব সংগঠনের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির নিকট ন্যস্ত থাকে। 

তিনি স্বীয় পদমর্যাদা বলে উক্ত ক্ষমতা ভোগ করেন এবং তার অধীনস্ত -ব কর্মকর্তা কর্মচারীর ওপর তা প্রয়োগ করেন। 

এ ধরনের ক্ষমতা পদসোপান নীতি অনুযায়ী সবার মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হয়। তারা যেসব কাজ সম্পাদন করেন তা আইনের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয় এবং এক্ষেত্রে আইনই হলো কর্তৃত্ব স্থাপনের মূল ভিত্তি ।

২. গ্রহণেচ্ছু কৰ্তৃত্ব : গ্রহণেচ্ছু কর্তৃত্ব হলো সংগঠনের এমন এক ধরনের কর্তৃত্ব যেখানে সংগঠনের কোনো কর্মকর্তা মনে করেন যে, তিনি যদি কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন তাহলে সংগঠনটি সাফল্যের সাথে পরিচালিত হবে। 

তার ওপর অধস্তন কর্মচারীদের আস্থা রয়েছে। তিনি যে নির্দেশ দিবেন কর্মচারীরা তা সহজেই মেনে নেবে। এ ধরনের কর্তৃত্ব প্রশাসনের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে চলে। 

সংগঠনের গ্রহণেচ্ছু কর্তৃত্বের নিজস্ব একটি অভিব্যক্তি থাকার ফলে অধীনস্ত সব কর্মচারী তার নির্দেশ মেনে নিয়ে কর্মসম্পাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

বিশিষ্ট জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ও আমলাতন্ত্রের জনক ম্যাক্স ওয়েবার কর্তৃত্বের তিনটি প্রকারভেদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি কর্তৃত্বের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ অনুযায়ী এর শ্রেণিবিভাগ করেছেন। 

নিম্নে ম্যাক্স ওয়েবার বর্ণিত কর্তৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক. ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব : ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের মূল উৎস হচ্ছে অতীতে সংঘটিত যেকোনো ঘটনাবলি। অতীতের প্রতি মানুষের অন্ধ আনুগত্যের ভিত্তিতেই ঐতিহ্যগত কর্তৃত্বের সৃষ্টি হয়। 

এখানে যাদের মাধ্যমে কর্তৃত্ব পরিচালিত হয় তাদের কর্তৃত্ব সকলে এ যুক্তিতে মেনে চলে যে সুদীর্ঘকাল ধরে এ ধরনের কর্তৃত্ব প্রচলিত। এ ধরনের কর্তৃত্ব বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং তা সকলের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও গ্রহণযোগ্য। 

ম্যাক্স ওয়েবার বলেছেন, “রাজনৈতিক কর্তৃত্বের আদি ও সর্বজনীনরূপ হলো ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব। এখানে অনুসারীরা ঊর্ধ্বতনের আইন মান্য করে এজন্য যে, সব সময় এসব কিছু হয়ে থাকে।” 

সাধারণত কোনো রাষ্ট্রের রাজা বা রানি বা কোনো উপজাতীয় গোষ্ঠীর প্রধান বংশানুক্রমে নির্দিষ্ট রীতিনীতির ভিত্তিতে ক্ষমতা পরিচালনা করে আসছে। 

উদাহরণস্বরূপ ব্রিটেনের রাজনীতিতে রানির যে কর্তৃত্ব তা ঐতিহ্যগত কর্তৃত্ব বলে বিবেচিত, যা তিনি ব্রিটেন ছাড়াও কানাডা, অস্ট্রেলিয়াতেও প্রয়োগ করে থাকেন।

খ. যুক্তিসংগত বা আইনানুগ কর্তৃত্ব : যুক্তিসংগত বা আইনানুগ কর্তৃত্ব বলতে এমন কতিপয় নিয়মকানুনের সমষ্টিকে বুঝায় যা কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। 

এ কর্তৃত্ব লিখিত ধরনের এবং কোনো অলিখিত বিষয়কে এর অন্তত করা হয় না। আইনানুগ কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে ব্যক্তির কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। 

মূলত প্রশাসনিক কর্তৃত্বই হলো আইনগত কর্তৃত্ব যেখানে যাবতীয় কার্যক্রম ও কর্তৃত্ব আইনের আওতায় প্রয়োগ করতে হয়। 

এ ধরনের কর্তৃত্ব সরকারি সচিবালয় বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উভয়ের জন্যেই প্রযোজ্য, যেখানে কর্মকর্তাগণ প্রাতিষ্ঠানিক আইনের ভিত্তিতে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন । আইনানুগ কর্তৃত্ব, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিসর, পদসোপান নীতি, নিয়োগ নীতি প্রভৃতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। 

গ. সম্মোহনী কর্তৃত্ব : সাধারণত সম্মোহনী কর্তৃত্ব এমন নেতার দ্বারা পরিচালিত হয় যার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, আকর্ষণ ক্ষমতা, ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা তাকে জনসাধারণের হৃদয়ে স্থান দেয়। 

এ ধরনের কর্তৃত্বের অধিকারী নেতা সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে এ ব্যতিক্রমধর্মী গুণ অর্জন করেন। ব্যক্তিগত গুণাবলি, দেশপ্রেম, সাহসিকতাপূর্ণ মনোভাব, শব্ দমনে কৃতিত্ব, স্বাধীনতার ডাক, ব্যাপক উন্নয়ন, তেজোদ্দীপ্ত ভাষণ প্রভৃতির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মানুষের মন জয় করতে পারেন যা তার সম্মোহনী (Charismatic) কর্তৃত্বের সৃষ্টি করে। সবাই তার কথায় মুগ্ধ হয়, তার আদেশ মানা করে। 

এভাবে ব্যক্তিগুণের সম্মোহনী প্রভাবে যে কর্তৃত্ব সৃষ্টি হয় তাকে সম্মোহনী কর্তৃত্ব বলা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চীনের মাও সেতুং প্রমুখ সম্মোহনী কর্তৃত্বের অধিকারী ছিলেন।

উপরে বর্ণিত তিন ধরনের কর্তৃত্ব ছাড়াও আরও কতিপয় কর্তৃত্বের ব্যাপারে নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. কারিগরি কর্তৃত্ব : কোনো ব্যক্তি বিশেষ কারিগরি দক্ষতার অধিকারী হয়ে কারিপরি বিশেষজ্ঞে রূপান্তরিত হন। 

ফলে কারিগরি বিষয়ে অন্য পেশার কেউ তার মতো দক্ষতাসম্পন্ন হয় না বিধায় তারা সে বিশেষজ্ঞের জ্ঞান ও দক্ষতা স্বীকার করে নেন। এটি কারিগরি কর্তৃত্ব যা ব্যক্তির দক্ষতাভিত্তিক এবং এটি কেউ অন্যের ওপরে চাপাতে পারে না।

২. আইনানুগ আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্ব : সাধারণত আইনানুগ আমলাতান্ত্রিক কর্তৃত্বে সব কার্যক্রম আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আইনই এ ধরনের কর্তৃত্ববাদীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। 

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় শাসন ও আমলাতন্ত্রে আইনানুগ কর্তৃত্ব স্বীকৃত যেখানে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী আইনানুগ কর্তৃত্ব লাভ করেন ।

৩. কার্যসম্পাদন কর্তৃত্ব : প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ যোগ্যতা ও পদাধিকারবলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্পাদনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদানই হচ্ছে কার্যসম্পাদনগত কর্তৃত্ব। 

যেমন- একটি বেসরকারি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রোডাকশন ম্যানেজারকে পণ্যের উৎপাদনের জন্য, হিসাবরক্ষককে কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য, সেলস ম্যানেজারকে পণ্যের বিক্রয়ের জন্য কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারেন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কর্তৃত্ব ও তার প্রয়োগ মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্তৃত্বের উপস্থিতির কারণেই সমাজ, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকে আছে। 

কর্তৃত্ব না থাকলে কেউ কারো কথা মান্য করবে না। পৃথিবীতে মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করবে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা, অশাস্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম কর্তৃত্ব কয় প্রকার ও কি কি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ