bangla data

নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর।

নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর
নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর

নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : নেতৃত্ব মানুষের একটি বিশেষ যোগ্যতা ও গুণ। নেতৃত্ব বলতে বুঝায় কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের এমন বিশেষ গুণ যার দ্বারা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করা যায় এবং মানুষকে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালনা করা যায়। 

যার ভিতরে এইসব অনন্য গুণাবলি থাকে তাকে বলা হয় নেতা। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একজন সুযোগ্য নেতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । 

কিন্তু এরকম সুযোগ্য নেতা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় না। নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক নয় সামাজিক। বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা পারিপার্শ্বিকতার ভিত্তিতে একজন ব্যক্তির ভিতর নেতৃত্বের গুণাবলি ফুটে ওঠে। এভাবেই তৈরি হয় একজন সুযোগ্য নেতা।

“নেতা জন্মায় না, তৈরি হয়।”- ব্যাখ্যা : একটি শিশু যখন মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভ করে তখন তার ভিতরে ক্ষুধার প্রবণতা ছাড়া আর কোনো জ্ঞান থাকে না। ধীরে ধীরে সে শিশুটি বড় হয় আর একটু একটু করে জ্ঞানলাভ করে । 

একটি চলমান সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় সারাজীবনই একটি মানুষ এই সমাজে কিছু না কিছু শেখে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় । বিভিন্ন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুণাবলি ফুটে ওঠে। 

সবাই একই গুণাবলি সমপরিমাণে লাভ করে না। কিছু কিছু মানুষ অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা হয়। তারা অন্যদের তুলনায় বুদ্ধি, শিক্ষা, চারিত্রিক গুণাবলি, মানবতা, চিন্তাশক্তি ইত্যাদিতে অন্যদের ছাড়িয়ে যায়। 

এসব গুণাবলির দ্বারা তারা অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শেখে। ধীরে ধীরে তার মধ্যে নেতৃত্বের অন্যান্য গুণাবলিও ফুটে ওঠে। এভাবেই একটি মানুষ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় নেতা হিসেবে গড়ে ওঠে। 

একজন নেতা কখনও মাতৃগর্ভ থেকেই নেতৃত্ব পুণ নিয়ে আসে না। নিম্নলিখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব নেতা জন্ম নেয় না বরং তৈরি হয় :

১. ব্যক্তিত্ব : একজন নেতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার ব্যক্তিত্ব। নেতা ব্যক্তিত্ব গুণে অনন্য । তার চরিত্রের মাধুর্য নমনীয়তা, তেজম্বিতা ইত্যাদি গুণে সে সবার চেয়ে আলাদা থাকে। 

আর তার এ ব্যক্তিত্ব গুণেই সবাই তাকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়। সব মানুষের ব্যক্তিত্বই তার বেড়ে ওঠার পরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ। তাই বলা যায়, ব্যক্তিত্ব মানুষ জন্মগতভাবে নয় সামাজিকভাবে অর্জন করে।

২. বুদ্ধিমত্তা : নেতা সবসময়ই সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়। নেতার যেকোনো জটিল ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সমস্যা মোকাবিলা করার মতো বুদ্ধিমত্তা থাকতে হয়। একজন নেতা তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এবং অর্জিত শিক্ষা থেকে এ বুদ্ধিমত্তা লাভ করে ।

৩. দূরদৃষ্টি : দূরদৃষ্টি নেতৃত্বের অন্যতম গুণ। একজন নেতা কোনো জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য অতীতের জ্ঞান ও বর্তমানকে মূল্যায়ন করে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। দূরদৃষ্টি কোনো জন্মগত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং সামাজিকভাবে অর্জিত গুণ।

৪. শিক্ষা : উত্তম ও উচ্চ শিক্ষা নেতার একটি অনন্য গুণ। নেতাকে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ করতে হবে এমন নয়, তবে উত্তমভাবে শিক্ষিত হতে হবে। 

বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জ্ঞান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। নেতা সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত হয়ে নেতৃত্বের জন্য গুণাবলি অর্জন করে। একজন সুশিক্ষায় শিক্ষিত নেতা জন্মগতভাবে নয় সামাজিকভাবেই তৈরি হয় ।

৫. অভিজ্ঞতা : অভিজ্ঞতা হলো একজন মানুষের অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার সামগ্রিক জ্ঞান। আর এ অভিজ্ঞতা মানুষ জন্মগতভাবে লাভ করে না; বরং জন্মের পরের জীবন থেকেই অর্জন করে। 

অভিজ্ঞতা নেতার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একজন নেতা তার বিভিন্ন অভিজ্ঞতার আলোকে কোনো কল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সঠিক অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই একজন নেতা দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।

৬. বাগ্মিতা : একজন সুযোগ্য নেতা অবশ্যই উত্তম বাশ্মি হবেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করতে পারবেন এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবিত করতে পারবেন। 

যেমন- বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রক্তবিন্দুর জ্বালাময়ী বক্তব্যের কারণেই বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রাণপণ লড়াই করেছিল। 

বঙ্গবন্ধু তার এই বাগ্মি গুণ জন্মগতভাবে লাভ করেননি। বিভিন্ন সংগ্রাম ও পড়াই এর মাধ্যমেই তার ভিতরে এই বাগ্মিতার গুণ ফুটে উঠেছিল।

৭. উত্তম শ্রোতা : একজন নেতা শুধু বক্তাই হবেন না তিনি একজন উত্তম শ্রোতাও হবেন । তিনি তার অনুসারীদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ, পরামর্শ, বক্তব্য ইত্যাদি মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করবেন । 

এভাবে সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে একজন নেতা তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । নেতৃত্বের এই অনন্য গুণটি কোনোভাবেই জন্মগতভাবে হতে পারে না। সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমই গড়ে ওঠে।

৮. দায়িত্ববোধ : দায়িত্ববোধ নেতৃত্বের অন্যতম গুণ। প্রকৃতপক্ষে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, জন্মগতভাবে নয়। 

নেতার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমেই তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন । নেতার দায়িত্ববোধের কারণেই তার অনুসারীরা নেতার ওপর নির্ভর করে ।

৯. নিরপেক্ষতা : নেতার কাছে কোনো পক্ষ বিপক্ষ থাকে না। তিনি নিজেকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী-গরিব, নারী- পুরুষ ইত্যাদির ঊর্ধ্বে রাখেন। তার কাছে সবাই সমান । 

একজন নেতা মানবিক গুণাবলি অর্জন করে এবং জনকল্যাণের নীতি গ্রহণ করে এই নিরপেক্ষতার গুণ লাভ করে ।

১০. যোগাযোগে পারদর্শী : একজন নেতা অবশ্যই যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার অনুসারী ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন । যোগাযোগের এই দক্ষতা একজন নেতা সামাজিকীকরণের মাধ্যমেই আয়ত্ত করেন। 

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুণাবলির ওপর আলোকপাত করে দেখতে পাই, একজন সুযোগ্য নেতা তৈরি হতে হলে উক্ত গুণাবলি নেতার ভিতরে থাকতে হবে। 

এ গুণাবলি একজন নেতা জন্মগতভাবে লাভ করেন না। শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা ইত্যাদি গুণাবলি একজন ব্যক্তি সামাজিকভাবেই অর্জন করেন । 

আর এসব গুণাবলির দ্বারাই একজন ব্যক্তি যোগ্য নেতা হতে পারেন। কাজেই বলা যায়, নেতা জন্ম নেয় না, তৈরি হয় । আর নেতা তৈরি হওয়ার এ প্রক্রিয়াটি সামাজিক ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নেতা জন্মায় না তৈরি হয় আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ