সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যা গুলো আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর
সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর

সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর

উত্তর ভূমিকা : লোকপ্রশাসনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। সিদ্ধান্ত গ্রহণ বলতে কিছু সম্ভাব্য বিকল্প হতে একটি বিকল্পকে বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বুঝায়। সর্বপ্রকার অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকিকে জয় করাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্য। 

পরিকল্পনা, সংগঠন, সংযোজন ও নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপরই যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ভালোমন্দ, সাফল্য-ব্যর্থতা, উন্নতি-অবনতি নির্ভরশীল। 

বস্তুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ একটি অত্যন্ত কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। আর তাই প্রত্যেক সিদ্ধান্ত প্রণেতাকেই সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ( 

লোকপ্রশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো : লোকপ্রশাসনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. রুটিনমাফিক কাজে অধিক ব্যস্ততা : সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রুটিনমাফিক কাজের প্রতি অধিক সময় দেওয়া। 

সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গবেষণার মাধ্যমে লক্ষ করা গেছে যে, একজন প্রশাসক যদি দৈনন্দিন রুটিনমাফিক কাজে অধিক সময় ব্যয় করেন তাহলে দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় স্থগিত রাখেন, না হয় বাতিল করে দেন। কারণ এতে যতটুকু মনোযোগ দেওয়া দরকার তা তার পক্ষে সম্ভব নয়।

২. সমাধানের জন্য সমস্যা নির্বাচনের ব্যর্থতা : সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করতে হলে অনেকগুলো সমস্যার মধ্য থেকে সমাধানের জন্য সবকটি বেছে নিতে হবে। কিন্তু সর্বপ্রথম কোন সমস্যার সমাধান করতে হবে তা ঠিক করা একটা বড় সমস্যা। 

ব্যক্তিগত বা সরকারি পর্যায়ে প্রায়ই আমরা এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি । বৃহদায়তন সংগঠনে সচরাচর অনেক সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে এবং প্রতিটি সমস্যাই একে অপর অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। 

প্রশাসন এসব সমস্যার মধ্যে কোনটি প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ ও অতি জরুরি এবং কোনটি অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন তা নির্বাচিত করতে গিয়ে হিমশিম খায়।

৩. সুদীর্ঘ পদ্ধতি বা কার্যপ্রণালি : সিদ্ধান্ত গ্রহণের আর একটি বড় সমস্যা হলো সুদীর্ঘ পদ্ধতি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাই মূলত এ জটিলতার জন্য দায়ী। 

সমগ্র প্রক্রিয়া বা কার্যপদ্ধতি দীর্ঘসূত্রিতায় ও ঘোরানো পথের বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যায় পরিপূর্ণ। ফলে এ পদ্ধতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। 

এমনকি সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় না যে, সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে। 

৪. পক্ষপাত প্রবণতা : পক্ষপাতিত্ব বা পক্ষপাত প্রবণতা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আর একটি উল্লেখযোগ্য বড় সমস্যা। ওপরের সমস্যাগুলোর কোনো না কোনোভাবে সমাধানের পন্থা রয়েছে। 

কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে পক্ষপাত প্রবণতা সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া খুবই দুরূহ। কদাচিৎ এর সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব। 

এজন্য এর চরিত্র বা প্রকৃতিই দায়ী। প্রশাসনে পক্ষপাতিত্ব বলতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে অযৌক্তিক আচরণকে বুঝায়।

৫. তথ্যের অভাব ও অপর্যাপ্ততা : একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করে একটা নির্বাচন করতে হয়। এ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দরকার সঠিক ও স্বচ্ছ তথ্য। 

কিন্তু প্রায়শই যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না, পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রশাসক বা ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন না।

৬. অপ্রত্যাশিত ফলাফল : মরটনের মতে, কোনো কোনো মূল্যবোধের বাস্তবায়ন মূল্যহীনতার জন্ম দেয়। কোনোকিছু পেলে বা অর্জন করলে অনেক সময় মনে হয় যে, এটি না পেলেই ভালো হতো। 

যে উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। তা যদি অর্জিত না হয় বা ফলাফল সন্তোষজনক না হয় তাহলে তাকে যুক্তিসিদ্ধ বলা সম্ভব নয় ।

৭. ব্যক্তিগত পছন্দ : সিদ্ধান্ত প্রণয়নে ব্যক্তিগত মতামতে পছন্দ বা অপছন্দ বিশেষ প্রভাব ফেলে। কোনো একটি বিষয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলেও দেখা যায় যে, একজন প্রশাসক অনেক সময় এগুলোকে উপেক্ষা করে তার ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য দিয়েছেন বা গ্রহণ করেছেন ।

৮. চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীর প্রভাব : কখনও কখনও প্রশাসক যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আগ্রহী হলেও চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীর প্রভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন । 

শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দলও বিভিন্ন সময়ে কোনো সংস্থার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে । এভাবে চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীর প্রভাব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ।

৯. নিমজ্জিত মূল্যের সমস্যা : নিমজ্জিত মূল্য বলতে অতীত খরচ ও বিনিয়োগকে বুঝায় । অতীতে যা খরচ হয়েছে তা আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। নিমজ্জিত খরচ হলো স্থায়ী খরচ। 

কোনো ব্যক্তি বা প্রশাসক যদি কোনো এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে দালানকোঠা নির্মাণ এবং যন্ত্রপাতি ক্রয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে ফেলেন এবং পরে অন্য কোনো কাজে হাত দেন তবে পূর্বের অর্থ তড়িৎ ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। 

ফলে নতুন কোনো কাজে হাত দিবে কি না তা তাকে ভালোভাবে চিন্তা করতে হয়। ফলে ব্যাপক সমস্যায় নিমজ্জিত হয় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তথাপি মানুষ সমস্যার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত না হয়ে; বরং পর্যবেক্ষণ ও অন্তর্দৃষ্টির সহায্যে সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিবেকবুদ্ধির পরিচয় দিবে এটাই স্বাভাবিক । 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা ভুলভ্রান্তি নিরসন করে বিবেকসম্পন্ন সিদ্ধান্ত প্রণয়নের ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা প্রদর্শন করে থাকে ।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যাগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ