হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর

 আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর  ( hepatitis c treatment )।

হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর
হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর

হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর

অথবা, ( vaccine for hepatitis c ) ‘হেপাটাইটিস সি এক নীরব ঘাতক'- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ভূমিকা : হেপাটাইটিস সি একটি মারাত্মক নীরব ভাইরাস। ১৯৮৯ সালে আমেরিকার ইমেরিভ্যালের কিয়োন করপোরেশনের কয়েকজন বিজ্ঞানী এ ভাইরাসটি আবিষ্কার করেন। 

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে ভোগে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের মতোই মারাত্মক। এটি রুগির রক্তের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। 

এর আক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক বছর পর্যন্ত ভুগতে পারে এবং যকৃৎ দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ১% থেকে ২% মারা যায়।

→ হেপাটাইটিস সি কি : হেপাটাইটিস সি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগকে ভাইরাস হেপাটাইটিস টাইপ সি বলা হয়। এটি নন-এ-ননবি (Non-A Non-B) গ্রুপের সদস্য। 

এ ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ৮ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পায়। অনেকক্ষেত্রে আবার ২ থেকে ২৬ সপ্তাহ সময় লাগে এ ভাইরাসটি দেহের প্রকারভেদ অনুযায়ী ৬টি কোনো টাইপ আছে এবং বহু উপটাইপ আছে তাই বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। 

স্বল্পমেয়াদি সংক্রামক সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিন্তু ১০% থেকে ২০% ফ্রু এর মত সংক্রামক ঘটায়। বহুক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে সকলের ইতিহাস এবং তীব্র যকৃৎ প্রদাহের অন্যান্য করণ যকৃৎ প্রদাহ সি এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সৃষ্টি হতে হতে রোগ শুরু হবার পর ১-৩ মাস সময় প্রয়োজন। সি বাইরাস বিসেী (Anti- Hev) মাত্র ৬০% যকৃৎ প্রদাহ সি এর মাঝে পাওয়া যায় ।

→ বর্তমান বিশ্বে হেপাটাইটিস সি এর ভয়াবহতা : বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৮ কোটি মানবদেহে হেপাটাইটিস সি বসবাস করছে। পৃথিবীর শতকরা ৩% মানুষের শরীরে এ ভাইরাস আছে। 

আমেরিকা মহাদেশে ২০ মিলিয়নের বেশি মানুষ ইউরোপ ৩০ মিলিয়ন, এশিয়ার ৭০ মিলিয়ন, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ১০ মিলিয়ন এবং আফ্রিকায় ৬০ মিলিয়ন লোক এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত । অনেক সুস্থ মানুষের দেহেও এ ভাইরাস থাকতে পারে ।

(ক) হেপাটাইটিস সি যেভাবে ছড়ায় : নিম্নলিখিত উপায়ে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে।

১. সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে ।

২. দৈহিক মিলন ও ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে।

৩. আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শরীরে প্রতিস্থাপন করলে । 

৪. রোগাক্রান্ত ব্যক্তির টুথ ব্রাশ ব্লেড, ব্লেজার কাঁচি ছুরি ব্যবহার করলে।

৫. অপারেশন বা সার্জারির যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে।

৬. গর্ভবতী মায়েদের শিশুদের হতে পারে যদি মায়েরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ।

৭. চুম্বন ও লেহনের সময় লালার মাধ্যমে। ৮ আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে ।

৯. আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দৈহিক মিলন করলে ।

১০. শিরাতন্ত্রের মাদক ও হিরোইন গ্রহণ করার মাধ্যমে।

১১. সমকামী লোকদের মাঝে পায়ু ও মুখ গহ্বর সংস্পর্শের জন্য এ রোগ ছড়াই।

১২. ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে। ১৩. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে ।

১৪. স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকলে এখানে সেখানে মল ত্যাগ করলে ।

(খ) হেপাটাইটিস সি এর প্রকাশ কাল : এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে তা ১৪-১৮২ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে । অনেকক্ষেত্রে ৩২ দিন থেকে ২৭০ দিন লাগাতে পারে । হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ :

১. খাবারের অরুচি বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। 

২. মাথা ব্যথা এবং হালকা পেট ব্যথা থাকতে পারে । 

৩. সামান্য জ্বর জ্বর ভাব ও শরীর ম্যাজ ম্যাজ করতে পারে । 

৪. শারীরিক ক্লান্তি আসে ও দেহের বিভিন্ন সারিতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে ।

৫. দুর্বলতা ও অলসতা ভাব থাকতে পারে।

৬. যকৃৎ আক্রান্ত হলে তা বেড়ে যায় ও বেদনাদায়ক হয় । 

৭. খাদ্যনলের শিরাস্ফীতি বা রক্তপাত ঘটতে পারে ।

(গ) হেপাটাইটিস সি নির্ণয়ের উপায় : হেপাটাইটিস সি নির্ণয়ের জন্য রোগ সম্পর্কিত ইতিহাস জানতে হবে। রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ কি তা জানতে ও দেখতে হবে। 

এছাড়া পরীক্ষাগারে রক্ত পরীক্ষা দ্বারা যকৃৎ প্রদাহ সি নির্ণয় করা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এইচ সি ভি (Anti-Hev ) এন্টিবডি টেষ্ট ও এইচ সিভি আর এন এ (Hev RNA) টেস্ট। 

তবে যকৃৎ প্রদাহ সি এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা সৃষ্টি হতে রোগ শুরু হবার পর ১-৩ মাস সময় প্রয়োজন হয়। এমনকি কখনও কখনও ১ বছর পর্যন্ত তা সনাক্ত করা যায় না। সি ভাইরাস বিষেী (Anti-Hev) মাত্র ৬০% যকৃৎ প্রদাহ সি তার মাঝে পাওয়া যায়। 

লিভার ফাংশন পরীক্ষা লিভার এনজাইম প্রোতাম্বিন টাইম, ভাইরাল মার্কারসমূহ এবং পের্টের মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি নির্ধারণ করা যায়। প্রথমে চেক করতে হবে (Hev) এইচসি ভি এন্টিবডি। টেষ্ট যদি পজেটিভ হয়। তবে বুঝবে ভাইরাস অধুনা হয়েছে বা ভাইরাস মরে গেছে।

→ চিকিৎসা : হেপাটাইটিস সি তে আক্রান্ত হলে এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। এমন কি এ চিকিৎসার জন্য কার্যকর ভ্যাকসিন নেই। 

কিন্তু সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসায় হেপাটাইটিস সি ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ নিরাময়যোগ্য হয়। হেপাটাইটিস সি রোগের অন্যতম প্রধান ঔষধ হচ্ছে পেগাসিস ও বিভারডিন যা বর্তমানে আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে।

হেপাটাইটিস সি হলে করণীয় :

১. পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ ও ফুটানো পানি খাওয়া। 

২. দৈনিক স্বাভাবিক খাবার খাওয়া ।

৩. জ্বর হলে নির্দিষ্ট কিছু অ্যন্টিবায়োটিক খাওয়া । 

৪. বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন জাতীয় খাদ্য খাওয়া।

৫. বেশি জটিলতা বা খারাপ অবস্থা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ।

হেপাটাইটিস সি এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা :

১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলা ।

২. রক্ত গ্রহণের আগে তা পরীক্ষা করে নেয়া তাতে কোনো ধরনের ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কি না। থাকলে তা গ্রহণ না করা ।

৩. রক্তদান, খাদ্য ও কর্নিয়া দানের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা যাতে ভাইরাস সংক্রমিত না হয়।

৪. স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এড়িয়ে চলা।

৫. মদ্যপান ও শিরার হিরোইনসহ অন্যান্য মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।

৬. স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা এবং যেখানে সেখানে মলত্যাগ না করা ।

৭. অপোরেশন বা সার্জারির যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করে অন্যের জন্য ব্যবহার করা।

৮. খাবারের আগে ও মলত্যাগের পরে সাবান দিয়ে ভালো ভাবে হাত ধোয়া

১০. আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ ব্লেড, কাঁচি, ছুরি পুনরায় ব্যবহার না করা

১১. যৌন মিলনের সময় অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা

১২. অবৈধ অবাধ ঝুঁকিপূর্ণ দৈহিক মিলন থেকে নিজেকে দূরে রাখা ।

১৩. হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীর পরিচর্যায় রক্তস্রাব কাপড় ও যন্ত্রপাতির নাড়াচাড়ার সাবধানতা অবলম্বন করা।

১৪. সি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে পরামর্শ দেওয়া ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে হেপাটাইটিস সি একটি মারাত্মক ঘাতক ভাইরাস। এ ভাইরাসটি যেকোনো মুহূর্তে এর আকৃতি ও মূল পরিবর্তন করতে পারে। 

এটি আস্তে আস্তে যকৃতের প্রদাহ সৃষ্টি করে তা প্রকাশ পেতে ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত সময় লাগে। দীর্ঘদিন ধরে জ্বালাপোড়ার শেষে লিভার সিরোসিস হয়ে ৪০-৬০% লিভার ক্যান্সার পরিণত হয়।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ সমূহ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ