সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাগুলো কী কী? বর্ণনা কর।

সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

  • অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাগুলো কী কী? বর্ণনা কর ।
  • অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ উল্লেখ কর ।

উত্তর ভূমিকা : সামাজিক গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সাক্ষাৎকার পদ্ধতি বা Intervied Method তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। এ পদ্ধতিতে একজন গবেষক গবেষণাধীন বিষয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট থেকে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহের মাধ্যমে গবেষণাকার্য সম্পন্ন করে থাকেন। 

অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতির ন্যায় এ পদ্ধতিরও কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এ পদ্ধতির আবেদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

• সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাসমূহ : প্রাথমিক তথ্যসংগ্রহের বহুল প্রচলিত ও ব্যবহৃত পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে কতিপয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব অসুবিধার কারণে দ্বৈবচয়িত পদ্ধতি সবসময় ও সর্বত্র ব্যবহার করা যায় না। 

সাক্ষাৎকার পদ্ধতির প্রধান প্রধান সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. পক্ষপাতিত্ব : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব ও মূল্যবোধ সংশ্লিষ্টতা অন্যতম অসুবিধা। 

এতে খুব সহজেই উত্তরদাতা তথ্যসংগ্রহকারীর মূল্যবোধ, পছন্দ, অপছন্দ, ইচ্ছা, অনিচ্ছা, নৈতিকতা ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। কারণ মুখোমুখি সম্পর্কের মধ্য দিয়ে তথ্যসংগ্রহকারী উত্তরদাতাকে প্রভাবিত করতে পারেন। 

২. ব্যয়বহুল : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি ব্যয়বহুল। কারণ এতে প্রশাসক, মাঠ তদারককারী, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এমনকি জনসংযোগ অফিসারের ব্যয় বহন করতে হয়। 

উপরন্তু, সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণকালীন বেতন ও অন্যান্য ধায়, এবং ভ্রমণের খরচ ইত্যাদি খাতে প্রচুর অর্থব্যায় করতে হয়।

৩. সময়সাপেক্ষ : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি একটি সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে অনেক সময় মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করতে হয়। 

কখনও একদিনে মাত্র এক বা মুষ্টিমেয় উত্তরদাতারই সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়। কোনো কোনো উত্তরদাতার সাক্ষাতের সময় নির্বাচনের জন্য তার কাছে একাধিকবার সাওয়ার হয়।

৪. সঠিকতা নিশ্চিত করা, কঠিন : এ পদ্ধতিতে উত্তরদাতার তথ্য প্রদানে চিন্তাভাবনা ও অন্যদের সাথে আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকে না। 

এতে উত্তরদাতা তার রেকর্ড পরীক্ষা করা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে আলোচনা করা এমনকি নিজের উত্তর বিবেচনা করার সুযোগ পায় না। এ অবস্থায় উত্তরদাতার প্রদত্ত তথ্যের সঠিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

৫. উত্তরের অযথার্থতা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি অনেক সময়ই উত্তরদাতার জন্য অসুবিধাজনক অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন— প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসুস্থতা, বৃষ্টি, উত্তাপ, শৈত্য ইত্যাদি সমস্যা মোকাবিলা করে 

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সুবিধাজনক নয়; অথচ অন্য পদ্ধতিতে হয়তো সুবিধাজনক সময়ে উত্তর দেওয়া সম্ভব। কখনও কখনও উত্তরদাতা দায়সারা গোছের উত্তর দিয়ে থাকেন।

৬. উত্তরদাতার অস্বতঃস্ফূর্ততা : এ পদ্ধতিতে উত্তরদাতার আত্মগোপনের সুযোগ নেই। কারণ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার পূর্ণ পরিচয় জানেন। 

এর ফলে উত্তরদাতা অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্তর দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। বিশেষ করে সংবেদনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং নিজের পরিচয় গোপন করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

৭. প্রশ্নের ধরনগত ভিন্নতা : এ পদ্ধতিতে সব উত্তরদাতাকে একইভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হয় না এমনকি একই ধরনের প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করা যায় না। 

প্রকৃত তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের উত্তরদাতাকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এর ফলে প্রশ্নপত্রের বিজ্ঞানসম্মত মান বজায় থাকে না এবং উত্তরদাতাদের উত্তরের তুলনা করা যায় না।

৮. উত্তর সহজপ্রাপ্য নয় : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। গবেষণা এলাকা যদি ব্যাপক বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে হয় তাহলে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়। 

তাছাড়া সামাজিক গতিশীলতার সমাজে উত্তরদাতাকে ঘরে পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার । তেমনিভাবে শহর এলাকায় উত্তরদাতা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।

৯. সঠিক তথ্য গোপন করা : অনেক সময় দেখা যায় যে, সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় উত্তরদাতারা সত্য গোপন করেন, - অসহযোগিতা করেন এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি করেন। 

প্রতিটি সমাজেই একটি বিশেষ শ্রেণি থাকে যারা সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করেন এবং এমনকি সাধারণ জনগণও তা করতে পারেন ।

১০. একই সময়ে অনেক কাজ  : এ পদ্ধতিতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে একই সাথে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে হয়। তাকে উত্তরদাতার সাথে কথা বলতে হয়, উত্তরদাতার কথা শুনতে হয় এবং উত্তরদাতার প্রদত্ত উত্তর স্মরণ রাখতে হয়। 

যেহেতু সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে একই সাথে অনেক কিছু করতে হয় কাজেই অনেক কিছু তার দৃষ্টি এড়িয়েও যায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর দৃষ্টি এড়িয়ে গেলে গবেষণা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

১১. হাপোর্ট প্রতিষ্ঠা কঠিন : সাক্ষাৎকার পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে রাপোর্ট প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বাস্তবে র্যাপোর্ট প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন কাজ। 

বাইরে থেকে একজন ব্যক্তি গিয়ে হঠাৎ করেই অপরিচিত একজন ব্যক্তির সাথে ভাবের আদানপ্রদান করে ফেলৰে, ৰাস্তবে এটি খুব কমই দৃষ্টিগোচর হয়। এজন্য শেষ বিচারে দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক ও দৃদ্যতাহীনই থেকে যায়।

১২. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ভিন্নতা : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের মধ্যে তারতম্য বিদ্যমান। কেউ ভালো র‍্যাপোর্ট করতে পারেন, কেউ পারেন না, কারো ব্যক্তিত্ব উত্তম, কারো তা নয় । 

এসব তারতম্যের কারণে তাদের সংগৃহীত তথ্যেও তারতম্য হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে অকাঠামোগত সাক্ষাৎকারে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের মধ্যকার তারতম্য তথ্যে ব্যাপক তারতম্যের সৃষ্টি করে ।

১৩. আঙ্গিকগত ভিন্নতা : সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষিতে তারতম্য বিদ্যমান। সব সাক্ষাৎকার একই প্রেক্ষিতে সংঘটিত হয় না। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে সংঘটিত সাক্ষাৎকার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের তথ্য দিতে পারে; অথচ প্রেক্ষিত ভিন্ন না হলে হয়তো একই ধরনের তথ্য পাওয়া যেত ।

১৪. তথ্যগত পার্থক্য : সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে সংগৃহীত তথ্যের রেকর্ডিংয়ে পার্থক্য বিদ্যমান। এ পদ্ধতিতে রেকর্ডিংয়ের সর্বজনগ্রাহ্য কোনো পদ্ধতি নেই বরং একেক জন একেকভাবে সাক্ষাৎকার রেকর্ড করে। যার ফলে তথ্যগত পার্থক্য হওয়াই স্বাভাবিক ।

১৫. উত্তরদাতার অস্বাভাবিকতা : এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় তথ্য লাভের জন্য উত্তরদাতাকে প্রেষণা দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় অত্যধিক প্রেষণার করণে উত্তরদাতা মানসিক স্থিরতা হারান এবং অতি আবেগের বশবর্তী হয়ে উত্তর দিতে থাকেন । অথচ তার প্রদত্ত উত্তর সঠিক তথ্য নয় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গবেষণার জন্য তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণ পদ্ধতি অন্যতম প্রধান পদ্ধতি হিসেবে গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে। 

যদিও এ পদ্ধতির কিছু অসুবিধা রয়েছে, তথাপি গবেষক বা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী যদি যথাযথ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকে তাহলে এসব অসুবিধাকে অতিক্সম করে এ পদ্ধতির আলোকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ